ডিবি কার্যালয়ে ঢোকার পর নিখোঁজ?

>
  • যশোরের কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইফুর রহমান ঢাকায় এসে নিখোঁজ হন
  • ২৭ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে তিনি মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে ঢোকেন
  • মনোনয়নপত্র তুলতে ঢাকায় এসে লাশ হয়ে ফিরেছিলেন একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা আবু বকর

এবার যশোরের কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সাইফুর রহমান ঢাকায় এসে নিখোঁজ হয়েছেন। তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের অভিযোগ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন ফোন করলে তিনি ঢাকায় আসেন। গত ২৭ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে তিনি মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে ঢোকেন। এরপর তাঁর আর খোঁজ মিলছে না।

এর আগে দলের মনোনয়নপত্র তুলতে ঢাকায় এসে লাশ হয়ে ফিরেছিলেন একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা আবু বকর (৬৫)। ১৯ নভেম্বর বুড়িগঙ্গায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। সেবার সাইফুর মেম্বার আবু বকরের সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন।

সাইফুরের পরিবার ও সহকর্মীরা জানান, সাইফুরকে ডিবির কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন বারবার ফোন করে ঢাকায় আসতে চাপ দিলে তিনি তা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহমানসহ অন্য মেম্বারদের জানান। চেয়ারম্যান আরেক মেম্বার আবদুল লতিফ গাজীকে সঙ্গে দিয়ে তাঁকে ঢাকায় পাঠান।

আবদুল লতিফ গাজী প্রথম আলোকে বলেন, ২৭ নভেম্বর ঢাকায় নেমে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা ডিবি কার্যালয়ে যান। সাইফুর এর মধ্যে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে কথাও বলেন। তাঁদের ১২টার দিকে ডিবির ফটকে থাকতে বলা হয়। সেই অনুযায়ী তাঁরা ডিবি অফিসের মূল ফটকসংলগ্ন চালাঘরে অপেক্ষা করেন। কিছুক্ষণ পরে ভেতর থেকে একজন লোক এসে সাইফুরকে ডেকে নিয়ে যান। লতিফ গাজী বলেন, তিনিসহ আরও দুই ব্যক্তি সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। পরে তাঁদের রাস্তার অপর পাড়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলা হয়। তিনি বলেন, ‘এরপর জোহর গেল, আসর গেল; সাইফুর আর আসে না। আমি গেটে যাই খোঁজ নিতে। আমারে কয়, ভেতরের খবর তারা জানে না। সইন্ধ্যার পরে আমি চইলে আলাম। এরপর আর কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি।’

নিখোঁজ সাইফুরের ভাই হাফিজুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আবু বকরের সঙ্গে বিএনপির রাজনীতি করতেন সাইফুর। তাঁর বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর হবে। তিনি অবিবাহিত।

মজিদপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, তিনি নানাভাবে যোগাযোগ করে সাইফুরের খোঁজ জানতে পারেননি। তবে সম্প্রতি ডিবির হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়া তিনজন রাজমিস্ত্রি তাঁদের ফোন করে জানিয়েছেন, সেখানে সাইফুরের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়েছে। তাঁরা বের হচ্ছেন জেনে সাইফুর তাঁদের কয়েকটি ফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছেন।

সাইফুরের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে না; করছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান বলেন, ‘ডিবি কাউকে ডেকেছে কি না, তা জানি না।’

যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবু বকর ১২ নভেম্বর সাইফুরসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। উঠেছিলেন পুরানা পল্টনের মেট্রোপলিটন হোটেলে। ১৮ নভেম্বর রাতে তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে হোটেল ছাড়েন। ১৯ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ। এবার ঢাকায় এসে নিখোঁজ হলেন সাইফুর মেম্বার।