সোহরাওয়ার্দীতে সোমবার ঐক্যফ্রন্টের জনসভা

রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি
রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১০ ডিসেম্বর বেলা দুইটায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানান।

এই ঘোষণার আগে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণতন্ত্রকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। সাংবিধানিক অধিকার যেমন সংকুচিত, তেমনি ক্ষমতায় থেকে লুটপাটকারীদের অর্থের দৌরাত্ম্য কালো থাবার মতো বিস্তার লাভ করেছে। এই অবস্থা থেকে জনগণকে মুক্ত করতে গণতন্ত্র রক্ষার যুদ্ধে নেমেছে বিএনপি, ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

ভোটের প্রচারের মধ্যে জনসভার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সভা-সমাবেশ করা একটি রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক অধিকার। এখন তো কোনো জরুরি অবস্থা চলছে না যে সভা-সমাবেশ করা যাবে না। নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ করা যাবে না, ঠিক আছে। কিন্তু দলীয় সভা-সমাবেশ করতে তো কোনো নিষেধ নেই। তিনি বলেন, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিজেদের দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ করতে, মিথ্যা মামলা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জনসভা করবে। সেখানে তো ভোটের প্রচার বা ভোট চাওয়ার জন্য জনসভা হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, সরকারের পক্ষে ইসির ‘নজিরবিহীন পক্ষপাতিত্ব’ ভোটারদের হতাশ ও ক্ষিপ্ত করে তুলছে। নির্বাচন সামনে রেখে দেশব্যাপী গ্রেপ্তারের মহোৎসব চলছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে গ্রেপ্তারের পরিমাণ বেড়ে গেছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত বিএনপির দুই হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চাপিয়ে দেওয়া শত শত মামলার বোঝায় নির্বাচনের মাঠ দূরে থাক, ঘরে পর্যন্ত থাকতে পারছেন না ধানের শীষের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। যাঁরা ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং প্রার্থী হয়ে যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, এ ধরনের ২৭ জন নেতা মিথ্যা মামলায় এখন কারাগারে। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে বিএনপিকে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নামে-বেনামে, গায়েবি মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের লাল দেয়ালের ভেতর ঘিরে রাখা হয়েছে। মামলা আর পুলিশি হয়রানির কারণে নেতা-কর্মীরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরপরও ক্ষান্ত হচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিবারের অন্য সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশি হেনস্তার ভয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্ভয়ে প্রচার চালাতে পারবেন কি না, এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, সারা দেশে যাঁরা ভোট গ্রহণ করবেন, সেই ডিসি, এসপি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠনের নির্দেশনা নির্বাচন কমিশন দেয়নি, উল্টো তাদের ‘পক্ষপাতিত্বের’ দিকে উসকে দিয়েছে ইসি। নির্বাচন কমিশনে দফায় দফায় ডেকে এনে সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সংলাপের নামে বিএনপি প্রার্থীদের হয়রানি করার ‘নির্দেশ’ দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ রিটার্নিং কর্মকর্তা আওয়ামী–অনুমোদিত মনোবৃত্তির দ্বারা প্রণোদিত।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, সিইসি শব্দটি উচ্চারণ করলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নাম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে তাঁর ভূমিকা দেশ-বিদেশে নিন্দিত ও কলঙ্কিত। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে কাজী রকিব যে পথে হেঁটেছেন, বর্তমান সিইসি কে এম নুরুল হুদাও যেন সে পথেই চলতে শুরু করেছেন। শুধু তা–ই নয়, সেটাকে এক ডিগ্রি বৃদ্ধি করে নৈতিকতার ‘মাথা খেয়ে’ নিজের ভাগনেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী করেছেন। তাঁর সঙ্গে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বসে বৈঠকও করছেন।

সরকারি কর্মকর্তাদের বদলির বিষয়ে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রশাসনের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এসপি এমন ৯২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে তাঁদের বদলি ও প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক পরিচিতি, কর্মকাণ্ডের তথ্যও দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনে। এর মধ্যে মাত্র একজন এসপি (নারায়ণগঞ্জ) বদলি করে সেখানে আরও কট্টর ‘আওয়ামীপন্থী ও বিতর্কিত’ এসপি হারুনকে পদায়ন করা হয়। অবিলম্বে পক্ষপাতদুষ্ট ৯২ জনকে বদলি করার আহ্বান জানান রিজভী। সারা দেশে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা বন্ধ করতে এবং গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়ার জোরালো দাবি জানান তিনি।