বাইক থেকে ল্যান্ডক্রুজার

শরিফুল ইসলাম
শরিফুল ইসলাম

এক দশক আগে শ্যালক, ভাই ও বাবার দানের টাকায় নির্বাচন করেছিলেন। ব্যাংকে সঞ্চয় বলতে ছিল না এক টাকাও। ছিল না গাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট। বাহন বলতে ছিল মোটরসাইকেল। আর এখন ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্ধকোটি টাকা এবং পকেটে লাইসেন্সধারী আগ্নেয়াস্ত্র।
এই ব্যক্তিটি হলেন বগুড়া-২ আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী শরিফুল ইসলাম। ২০০৮ সালে তিনি বিপুল ভোটে হেরে যান। কিন্তু ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন। এবারও তিনি মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থী। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে ধানের শীষ নিয়ে লড়বেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না।
নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিফুল ইসলামের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১০ বছর আগে স্থাবর–অস্থাবর মিলে তাঁর সম্পদ ছিল ১৯ লাখ ২২ হাজার টাকার। এখন এই সম্পদ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ব্যাংকে আছে আরও অর্ধকোটি টাকা। সম্পদ বেড়েছে পাঁচ গুণ। তবে এখনো নিজের কোনো ফ্ল্যাট নেই, স্ত্রী মোহসিনা আকতারের বাড়িতে থাকেন। স্ত্রীর সম্পদও বেড়েছে দ্বিগুণ।
এবারের হলফনামা অনুযায়ী, সাংসদ শরিফুল ইসলামের ৭৯ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮৮ টাকার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। ১০ বছর আগে ছিল ১৩ লাখ ১২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ। ২০০৮ সালের হলফনামায় নগদ ১০ লাখ টাকা, ৭৭ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোটরসাইকেল থাকার কথা উল্লেখ ছিল। তখন ব্যাংকে কোনো টাকা ছিল না। এখন ব্যাংকে জমার পরিমাণ ৫০ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ টাকা। আগের মোটরসাইকেলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ল্যান্ডক্রুজার পাজেরো। এই গাড়ির দাম উল্লেখ করা হয়েছে ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯১ টাকা। আরও যুক্ত হয়েছে দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি ৩২ বোরের পিস্তল এবং ১ লাখ টাকা মূল্যের ২২ বোরের একটি রাইফেল।

সম্পদের সঙ্গে হলফনামার অসংগতি
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সাংসদ শরিফুল ইসলামের বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া এলাকার ঘটুমিয়া লেনে ১৬ শতক জায়গা এবং একটি পাঁচতলা বাড়ি, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীহারা এলাকায় এসকেবি ইটভাটা, মহাস্থানগড় এলাকায় যৌথ মালিকানাধীন একটি মার্কেট, মহাস্থান বন্দরে নিজের মালিকানায় মর্নিং সান কেজি স্কুল, একই এলাকায় বিশাল আয়তনের লিচুবাগান এবং বগুড়া শহরের ছহির উদ্দিন মার্কেটে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া স্ত্রী মোহসিনা আকতার ও ছেলে হোসাইন শরিফের নামে দুটি গাড়িও রয়েছে। হলফনামায় এসব সম্পদের কথা গোপন করার অভিযোগ উঠেছে সাংসদের বিরুদ্ধে।
শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সম্পদের সবই হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। ঘটুমিয়া লেনের বাড়িটি তাঁর স্ত্রীর। নিজের মালিকানায় জায়গা একসময় ছিল, তবে এখন তা বিক্রি করেছেন। স্ত্রী-ছেলের ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলেও এর মালিক তাঁর বন্ধুবান্ধব বলে তিনি দাবি করেন।