মামলা মাথায় নিয়ে ভোটের মাঠে

আমীর খসরু, আবদুল্লাহ আল নোমান ও শাহাদাত হোসেন
আমীর খসরু, আবদুল্লাহ আল নোমান ও শাহাদাত হোসেন

মামলা মাথায় নিয়ে নির্বাচনের মাঠে বিএনপির প্রার্থীরা। একেকজন প্রার্থীর বিপক্ষে দুই থেকে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত কারাবন্দী বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী। হলফনামায় তাঁর মামলাসংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৬৮। তিনি ২০০৮ সালেও চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। তখন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। তাঁর প্রার্থিতা রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতিল করেছেন। তবে তাঁর পক্ষে কমিশনে আপিল করা হয়েছে।
তাঁর মতো চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের সম্ভাব্য বিএনপি প্রার্থীদের বেশির ভাগের ঘাড়ে মামলার বোঝা রয়েছে। অপর দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সিংহভাগ মামলামুক্ত। কারও কারও থাকলেও তা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন আগেই। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মামলা ছাড়া বিএনপির কেউ নেই। নেত্রী খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে সবার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে চলছে হয়রানি, ধরপাকড়। নির্বাচন করতে না দেওয়ার জন্যই এই মামলা হামলা হচ্ছে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে পাঁচ প্রার্থী বর্তমানে কারাগারে। তাঁদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন (গিকা) কাদের চৌধুরী চট্টগ্রাম-২, যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম-৪, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম-৯, জামায়াত নেতা আ ন ম শামসুল ইসলাম ও শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে হলফনামা জমা দিয়েছেন। ঋণখেলাপির কারণে গিয়াস কাদের ও আসলাম চৌধুরীর প্রার্থিতা বাতিল হয়।
চট্টগ্রাম–৯ (কোতোয়ালি) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৪০টি। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা নেই।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন শিল্পপতি সামসুল আলম। তিনি এবারও একই আসন থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তাঁর মামলা সংখ্যা ৭৭ উল্লেখ করেছেন। নবম সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় তাঁর নামে কোনো মামলা ছিল না। এবার তাঁর মনোনয়নও ঋণের কারণে বাতিল হয়।
একইভাবে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে আসলাম চৌধুরীরও কোনো মামলা ছিল না। একই আসনে (সীতাকুণ্ড) আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা থাকলেও তা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খানের বিরুদ্ধে মামলা আছে ৫টি। তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন দুটি মামলা থেকে। তাঁর মনোনায়নপত্র খেলাপি বিলের কারণে বাতিল হয়। তিনি আপিল করেছেন।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের আগে মামলা ছিল একটি। এর আগে অব্যাহতি পেয়েছিলেন ছয়টি থেকে। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা আছে আটটি। অবশ্য তা স্থগিত আছে।
এই আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ আফছারুল আমীনের বিরুদ্ধে আগে দুটি মামলা থাকলেও অব্যাহতি পেয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নামে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মামলা ছিল দুটি। এখন তিনি ১৪টি মামলার আসামি। তিনি কারাগার থেকে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন। এ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ লতিফের নামে কোনো মামলা নেই।
এ ছাড়া জেলার ১০টি আসনেও বিএনপি বা ২০–দলীয় জোটের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এক বা একাধিক মামলা আছে। তবে পটিয়ার গাজী শাহজাহান জুয়েল, মিরসরাইয়ের মনিরুল ইউসুফ ও কামাল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা নেই। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী এনামুল হকের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা না থাকলেও বর্তমানে চারটি মামলা আছে। একই আসনে নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক গাজী মো. সিরাজ উল্লাহও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর নামে ৮৭টি মামলা রয়েছে।
চট্টগ্রাম-২ আসনে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা আছে সাতটি। এর আগে তিনি তিনটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। এ আসনে তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মহাজোটের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
গিয়াস কাদেরের ছেলে সামির কাদের চৌধুরী পাশের উপজেলা রাউজান (চট্টগ্রাম-৬) আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে একটি মামলার রায় হয়েছে। এতে তাঁর ছয় মাসের দণ্ড হয়। একই আসনে আওয়ামী লীগের ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি মামলা ছিল। দুটি থেকে অব্যাহতি এবং দুটি থেকে খালাস পান তিনি। এ ছাড়া অপর মামলাটি আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে।