নির্বাচনে কালোটাকা: নজর রাখছে দুদক

দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনে কালোটাকা ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তার ওপর নজর রাখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কোন উৎস থেকে নির্বাচনী ব্যয় করা হচ্ছে, সেটা সংসদ নির্বাচনের পর খতিয়ে দেখা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

আজ বৃহস্পতিবার সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কেউ কালোটাকা ব্যবহার করলে তাদের তালিকা তৈরি করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কাজ করতে সংস্থার গোয়েন্দা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘দেশের মানুষ বা আপনারা আমরা কেউ চাই না যে নির্বাচনে কালোটাকা ব্যবহার করা হোক। আমাদের ইনটেলিজেন্স ইউনিটকে একটি গাইড লাইন দিয়েছি। সেটা আমি প্রকাশ করতে চাই না।’ এ বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কে কতগুলো গরু জবাই করলেন, কতগুলো খাসি জবাই করলেন, কতগুলো লাল পোস্টার করলেন। যেটা আইনসিদ্ধ নয়। সেগুলো আমাদের ইনটেলিজেন্স ইউনিট কালেক্ট করে একটি তালিকা তৈরি করবেন। আমরা ওই রিপোর্ট নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘ফ্ল্যাট ও প্লটে কালোটাকা চলে যাচ্ছে। এ বিষয়টি দুদক অবহিত। দুদক সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ পাঠিয়েছে। সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বলে দুদকের প্রত্যাশা। কালোটাকা যদি বিনিয়োগ হতো তাহলে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারত।’

নির্বাচনী হলফনামার বিষয়ে দুদক কী ব্যবস্থা নেবে, জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই জনগণের প্রত্যাশা থাকে নেতাদের চরিত্র পূত-পবিত্র হতে হবে। আমাদের দেশেরও নেতার নেতৃত্বে অবশ্যই সততা ও জবাবদিহি থাকতে হবে। এ জন্য আমি বলেছিলাম, যারা হলফনামায় তথ্য দেবেন তা যেন সঠিকভাবে দেন। হলফনামা পাবলিক ডকুমেন্ট। আমাদের গোয়েন্দা ইউনিট সেগুলো সংগ্রহ করছে।’ হলফনামায় দেওয়া তথ্য যাচাইয়ের জন্য এনবিআর, ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের কথাও জানালেন তিনি।
নির্বাচনে মনোনয়ন–বাণিজ্য নিয়ে যে তথ্য এসেছে, সে বিষয়ে দুদক কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এটা দুদকের বিষয় নয়।

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিষয়টি দুদকের না, ব্যাংকের। তবে যদি কেউ জাল-জালিয়াতি করে ঋণ নেন, তাহলে বিষয়টি দুদকের। এ জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেই একটি অডিট রিপোর্ট দিতে হবে। অনেকেই আছেন যাঁরা এনবিআরে এক রকম ও ব্যাংক ঋণের নেওয়ার সময় আলাদা অডিট রিপোর্ট দেন। আমরা এসব জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি।’

এর আগে লিখিত বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান জানান, কমিশন গত ১২ বছরে (২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৮৯টি মামলা দায়ের করেছে। একই সময়ে পাঁচ হাজার ৫২০টি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে (বিলুপ্ত ব্যুরো আমলের মামলাসহ)। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ বছরে ১ হাজার ৩২১টি মামলায় আসামিদের বিচারিক আদালতে সাজা হয়েছে। কমিশনের মামলায় সাজার হার ২০১৭ সালে ছিল ৬৮ ভাগ। এ হার ক্রমাগত বাড়ছে। কমিশন প্রতিটি মামলা মনিটরিং করছে। মামলার বাদী, সাক্ষী ও প্রসিকিউটরদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে।

কমিশনের অনুসন্ধান ও তদন্ত এবং প্রসিকিউশন কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, কমিশনের প্রত্যাশা শতভাগ মামলায় সাজা দেওয়া। এ ক্ষেত্রে কমিশনের সক্ষমতার ঘাটতিকে আমরা অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণের পাশাপাশি একটি কারণ হিসেবে মনে করি। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রকাশে ন্যূনতম কুণ্ঠাবোধ করি না।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে মানুষ প্রতিনিয়তই অভিযোগ জানাচ্ছে। গত বছরই কমিশন প্রায় ১৮ হাজার লিখিত অভিযোগ পেয়েছে। এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১২ হাজার ২২৭টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইনে (১০৬) অভিযোগ জানাতে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ২২০টি ফোন কল এসেছে। এতে আমাদের মনে হয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। মানুষ দুর্নীতিপরায়ণদের মন থেকে ঘৃণা করে।

মতবিনিময় সভায় দুদকের পক্ষে আরও বক্তব্য দেন কমিশনার মোজাম্মেল হক খান ও সচিব সামসুল আরেফিন। সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য দেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, একুশে টিভির প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী মনজুরুল আহসান বুলবুল, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, আরটিভির প্রধান নির্বাহী আশিক রহমান, ডিবিসি টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল ইসলাম, একাত্তর টিভির প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন, দেশ টিভির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান, চ্যানেল ২৪–এর বার্তা প্রধান রাহুল রাহা, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশিষ সৈকত প্রমুখ।