নির্বাচনের পর ডিজিটাল আইনে পরিবর্তন: গওহর রিজভী

পুরস্কার বিজয়ীদের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো
পুরস্কার বিজয়ীদের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ডিজিটাল আইনে পরিবর্তন আনা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। আজ দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা ও ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৮’–এর প্রধান অতিথি ছিলেন গওহর রিজভী। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা ডিজিটাল আইনের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রধান বাধা এখন ডিজিটাল আইন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গওহর রিজভী নির্বাচনের পর ডিজিটাল আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে বলে জানান।

গওহর রিজভী বলেন, বিভিন্ন সময় আইন প্রয়োগে ত্রুটি ধরা পড়ায় পার্বত্য ভূমি আইনে পাঁচবার সংশোধন আনা হয়েছে। নির্বাচনের পর গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আরও কথা বলে ডিজিটাল আইনেরও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। তিনি আরও বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হলো সভ্যতার ভিত্তি। মতপ্রকাশ ছাড়া সভ্য সমাজ তৈরি হতে পারে না। মতপ্রকাশকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণও করা যাবে না। মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে একটি বাধা তৈরি হলে গোটা ব্যবস্থাটাই ধ্বংস হয়ে যাবে। এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, প্রকৃত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা আসলে আইন দিয়ে ঠেকানো যায় না। যেখানে দুর্নীতি থাকে, সেখানেই দারিদ্র্য থাকে। দুর্নীতিমুক্ত না করে কোনো দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা যায় না।

দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে গওহর রিজভী বলেন, সম্প্রতি এক ধনাঢ্য ব্যক্তির ছেলে ধর্ষণ করল, তাদের বাড়ির বিয়েতে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা গেলেন। এটি সামাজিক দৈন্য।

টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ডিজিটাল আইন তৈরি করে একটি ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হবে এ আইনের কারণে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ডিজিটাল আইন পরিবর্তনের দাবি জানান।

এর আগে বক্তব্য দেন প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন, ডিবিসি চ্যানেলের সম্পাদক জাহিদুল হাসান পিন্টু ও সংবাদ সংস্থা ইউএনবির নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ। তাঁরা ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার-২০১৮ ’-এর বিচারক ছিলেন।

যাঁদের হাতে টিআইবির পুরস্কার
‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৮’ পেয়েছেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মিলিয়ে ছয়জন প্রতিবেদক ও দুটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান। এর মধ্যে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. আনোয়ার হোসেন ‘গতি পাচ্ছে না রেলওয়ে’ তিন পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য দৈনিক পত্রিকা ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিবেদকের পুরস্কার পান। তা ছাড়া এ ক্যাটাগরিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর প্রতিবেদন করায় যৌথভাবে সমকাল পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি রাজীব নূর ও সহসম্পাদক জাহিদুর রহমান পুরস্কার পেয়েছেন। আঞ্চলিক পত্রিকা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রবাহের নিজস্ব প্রতিবেদক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান।

টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন মাছরাঙা টেলিভিশনের উৎপল মির্জা ও একাত্তর টিভির মুফতি পারভেজ নাদির রেজা। অনুষ্ঠান ক্যাটাগরিতে ইনডিপেনডেন্ট টিভির ‘তালাশ’ ও যমুনা টিভির ‘৩৬০ ডিগ্রি’ পুরস্কার পেয়েছে। পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, সঙ্গে আছে সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট।