বাংলাদেশকে যেন পেছন ফিরতে না হয়: প্রধানমন্ত্রী
সমাজকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তুলতে প্রশাসন ক্যাডারের নবীন কর্মকর্তাদের সততা, নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগের সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে ১০৭, ১০৮ ও ১০৯তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি এমন জায়গায় দেশকে রেখে যাচ্ছি, যেন বাংলাদেশকে আর পেছন ফিরে তাকাতে না হয়। সামনের দিকে যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, সে অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে।’
নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির হাত থেকে সমাজকে মুক্ত রাখতে হবে। যে যখন যেখানে দায়িত্ব পালন করবেন, এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।’ এগুলো একটি সমাজ ও পরিবারকে ধ্বংস করে দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশ যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কিন্তু এ অভিযান অব্যাহত রেখে দেশকে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত করতে হবে।’
কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘এই যে দিকনির্দেশনাগুলো দিয়ে গেলাম, সেগুলো যদি অন্তত অনুসরণ করা হয়, তাহলে যাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের জন্য যেমন সুযোগ সৃষ্টি হবে, তেমনি দেশের মানুষের আরও উন্নত জীবন নিশ্চিত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সরকারি কর্মচারীদের বেতন–ভাতা এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘এটা আমরা এ জন্যই করেছি, যেন দেশের সেবাটা আপনারা ভালোভাবে করতে পারেন।’ তিনি এই বেতন-ভাতা বৃদ্ধিকে পৃথিবীতে নজিরবিহীন উল্লেখ করে বলেন, তাঁর দেশের অর্থনীতিটা একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে বলেই এগুলো করা সম্ভব হয়েছে।
পত্রিকা পড়ে গাইডলাইন গ্রহণ করি না
শেখ হাসিনা হলুদ সাংবাদিকতার সমালোচনা করে বলেন, ‘পত্রিকায় এটা–ওটা লেখা হয়, আর আমাদের অনেকেই সেটা নিয়ে ঘাবড়ে যান। আমি অন্তত এটুকু বলতে পারি, রাষ্ট্র পরিচালনায় পত্রিকার লেখা পড়ে গাইডলাইন গ্রহণ করি না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গ্রহণ করি আমাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং নিজস্ব পরিকল্পনা। কে কী বলল, সেটা শুনে রি–অ্যাক্ট করার চিন্তাতেই আমি বিশ্বাস করি না।’ তবে পত্রিকা থেকে তিনি খবর এবং তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন বলেও ইঙ্গিত দেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘দেশটা আমার, আমার দেশকে আমি চিনি, আমি জানি দেশের জন্য কোনটা ভালো হবে। আর যেহেতু রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আছি, তখন অবশ্যই জানব কোথায় কী সমস্যা আছে, কোথায় কী করতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো কাজ করতে গেলেই জটিলতা, তার ওপর আবার মামলা। তারপরও আমরা ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সচিব পদে ১৮০ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৫০ জন, যুগ্ম সচিব পদে ২০২৫ জন এবং উপসচিব পদে ২৬৮৬ জনকে পদোন্নতি দিতে সক্ষম হয়েছি। এ রকম পদোন্নতি বোধ হয় কোনো দিন কোনো সরকার একসঙ্গে দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা সেটা দিতে পেরেছি।’
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এবং জনপ্রশাসনসচিব ফয়েজ আহমেদ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। ১০৭, ১০৮ ও ১০৯তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের রেক্টর পদকজয়ী শ ম আজহারুল ইসলাম সনেট, শরিফ আসিফ রহমান ও মো. মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী পরে সিভিল প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং বিসিএস প্রশিক্ষণ একাডেমির নবনির্মিত প্রশাসনিক ভবনের উদ্বোধন করেন।