বিএনপি নাকি জামায়াত

কক্সবাজার-২ আসনে কে হচ্ছেন ২০–দলীয় জোটের প্রার্থী—বিএনপির আলমগীর মো. মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ নাকি জামায়াতে ইসলামীর এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ। এ নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। ভোটের হিসাব ছাপিয়ে প্রার্থিতাই এখন ভোটের মাঠে মুখ্য আলোচনায়।

বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় দুটি দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া নিয়ে জাতীয় সংসদের এই আসন। হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ১৭৭ জন। এর মধ্যে মহেশখালীতে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৫৩ ও কুতুবদিয়ায় ৮৪ হাজার ৫২৪ জন।

ফরিদের বাড়ি মহেশখালীতে। আর হামিদের বাড়ি কুতুবদিয়ায়। কুতুবদিয়ার তুলনায় মহেশখালীর ভোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১২৯ বেশি।

এ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিকের বাড়িও মহেশখালীতে। আশেক উল্লাহ রফিক সম্পর্কে আলমগীর ফরিদের আপন ভাতিজা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, আলমগীর ফরিদ জোটের প্রার্থী না হলে লাভবান হবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তখন আলমগীর ফরিদের সমর্থকেরা দোটানায় থাকবেন। আর যদি আলমগীর ফরিদ প্রার্থী হন—সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোটের হিসাব জটিল হয়ে দাঁড়াবে। তখন চাচা-ভাতিজার ভোটযুদ্ধ হবে।।

জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। জোটগতভাবে কক্সবাজার-২ আসনটি আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হামিদুর রহমান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন এটিই চূড়ান্ত। ৮ ডিসেম্বর জোটগতভাবে আসন ভাগাভাগি হলে ধারণাটা পরিষ্কার হবে। যদিও হামিদুর রহমান এখনো কারাগারে বন্দী। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি মুক্তি পেতে পারেন।’

জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, চারটি আসনে বিএনপির চারজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। কিন্তু কক্সবাজার-২ আসনেই জামায়াতের হামিদুর রহমান মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ৮ ডিসেম্বর জানা যাবে, এ আসনে প্রার্থী হামিদুর রহমান নাকি আলমগীর ফরিদ।

বিগত সংসদ নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হামিদুর রহমান ১৭ হাজার ২৭ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনসারুল করিমকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন।

আবার ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিরাজুল মোস্তফাকে ১২ হাজার ২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন বিএনপির আলমগীর ফরিদ। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীকে ৫৪ হাজার ৩১৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে দ্বিতীয়বার সাংসদ নির্বাচিত হন বিএনপির আলমগীর ফরিদ।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আশেক উল্লাহ রফিক। 

মামলায় হামিদ, সম্পদে এগিয়ে ফরিদ
হামিদুর রহমানের মামলা আছে ৬৩টি। সব কটি মামলা রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও আদালতে। মামলার অধিকাংশ দ্রুত বিচার ও বিস্ফোরক আইনে।

অন্যদিকে আলমগীর ফরিদের মামলা তিনটি। এগুলো বন, পরিবেশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে। নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।

আলমগীর ফরিদের অস্থাবর সম্পত্তিতে আছে নগদ ও ব্যাংকে জমা ৩৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৭০ টাকা, ট্রেজারি বন্ড ৫০ হাজার, জীবনবিমা ও ডিপিএস ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৪১৫ টাকা। ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দামের একটি গাড়ি। আছে একটি পিস্তল ও একটি শটগান।

আর হামিদুর রহমানের আছে নগদ ৪ লাখ ৭০ হাজার, ব্যাংকে ১১ হাজার ৮১৯, শেয়ার ৭ লাখ ২৭ হাজার ৫৫০ টাকা। স্বর্ণ আছে ৪ ভরি। স্থাবর সম্পত্তি অকৃষি জমি ৬ শতক, ১ দশমিক ২৫ কাঠা জমিতে দালান, ৮৫ লাখ টাকার অ্যাপার্টমেন্ট ও পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমির বুকিং ৩০ লাখ টাকা।

আর আলমগীর ফরিদের আছে কৃষিজমি ৪ দশমিক ৩৫৯ একর, অকৃষি জমি ২ দশমিক ২৪৭৫ একর, ৬টি ফ্ল্যাট ও মৎস্য প্রকল্প। তাঁর পেশা—লবণ উৎপাদন, কৃষি ও চিংড়ি চাষ।