বড় অঙ্কের ঋণ শোধ করেও সম্পদ বেড়েছে ৩৩ গুণ

আবদুল মজিদ খান
আবদুল মজিদ খান

২০০৮ সালে আয়-সম্পদ ছিল নগণ্য। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তা বেড়েছে উল্লেখ করার মতো। অবশ্য, তখন ঋণের বোঝা ছিল। এখন সেই ঋণ শোধ দিয়েছেন। সম্পদের পরিমাণ লাখের অঙ্ক থেকে কোটিতে নিয়ে গেছেন। এই অবস্থা হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের সাংসদ আবদুল মজিদ খানের। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। হলফনামা বলছে, এই ১০ বছরে সাংসদের আয় বেড়েছে ২৪ গুণ। আর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৩৩ গুণেরও বেশি।

আবদুল মজিদ খান ২০০৮ সালে যখন প্রথম নির্বাচন করেন তখন তাঁর কৃষিজমি ছিল চার একর। তাও পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। কৃষি খাতে বছরে তাঁর আয় ছিল মাত্র ১০ হাজার টাকা। আইনজীবী হিসেবে আয় করতেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তখন স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে সাংসদের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৫ টাকার। অকৃষিজমি ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৫ টাকার। তিনটি আধা পাকা ঘর ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার।

২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় আবদুল মজিদ খানের বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ১০ হাজার ৪৫০ টাকা। কৃষি খাতে আয় ২৫ হাজার ২০০ টাকা। বাড়িভাড়া থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৫০ টাকা। আর আইন পেশা থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ওই সময়ে তাঁর হাতে নগদ ছিল ১ লাখ টাকা; ব্যাংকে জমা ছিল ৩ লাখ টাকা। এই টাকাসহ তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৪১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৭৯ টাকা। এর মধ্যে ছিল ১ কোটি ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭১৩ টাকা দামের হবিগঞ্জ শহরে একটি ছয়তলা বাড়ি। ছিল ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ২৬৯৪ সিসির একটি টয়োটা গাড়ি। ছিল ৩ একর কৃষিজমি, যার অর্জনকালীন দাম মাত্র ৩০ হাজার টাকা। ৫০.৮৩৫০ শতক অকৃষিজমি ছিল আরও ২ লাখ ৫ হাজার ৩৩১ টাকার। অবশ্য বাড়ি নির্মাণ বাবদ তিনি ৬৯ লাখ ৭ হাজার ৮০০ টাকার ঋণ দেখিয়েছিলেন তখন।

এই ১০ বছরে সাংসদের আয় বেড়েছে ২৪ গুণ। আর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৩৩ গুণেরও বেশি।

এবারের হলফনামায় সাংসদ তাঁর কোনো ঋণ নেই বলে উল্লেখ করেছেন। সাংসদের আয় ও সম্পদ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে গত পাঁচ বছরে। বর্তমানে বার্ষিক আয় ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার ৪০০ টাকা। কৃষি খাত থেকে পান ২৩ হাজার ৪০০ টাকা। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান ভাড়া থেকে পান ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা। মৎস্য খামার থেকে আয় ২০ লাখ টাকা। সাংসদের পারিতোষিক থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার। সাংসদ অন্যান্য খাত হিসেবে রবিশস্যকে উল্লেখ করে এই খাত থেকে বছরে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

বর্তমানে আবদুল মজিদ খানের স্থাবর-অস্থাবর মোট সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ১৫ লাখ ১৬ হাজার ৪৪ টাকা। এর মধ্যে তাঁর হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ২ লাখ টাকা। ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া সাংসদের স্ত্রীর কাছে নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ৪০ হাজার টাকার ১০ ভরি স্বর্ণ আছে। সাংসদের ২৫ লাখ ২৪ হাজার টাকার একটি টয়োটা ফরচুনা জিপের পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকার একটি হার্ড জিপ আছে। ইলেকট্রনিকস ও আসবাব আছে ৬০ হাজার টাকার। ২০১৪ সালের হলফনামায় দেখানো ৩ একর কৃষিজমি এবারও ঠিক আছে। তবে বেড়েছে অকৃষিজমির পরিমাণ। বর্তমানে ১৩৩.৫০ শতক অকৃষিজমির দাম দেখিয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ২৭৫ টাকা। পাশাপাশি সাংসদের আরও হয়েছে সাত কাঠা অকৃষিজমি, যার দাম ২০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। আছে ১ কোটি ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭১৩ টাকা মূল্যের ছয়তলা ভবন। সাংসদ মৎস্য ব্যবসা থেকে ২০ লাখ টাকার আয় দেখালেও এ–সংক্রান্ত মূলধন বা সম্পদের কোনো বিবরণ হলফনামায় দেননি।

সাংসদ আবদুল মজিদ খান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর আয় সম্পদ যা-ই বেড়েছে, সবই হলফনামায় উল্লেখ আছে। এর বাইরে কোনো কিছুই তাঁর নেই। মৎস্য ব্যবসা থেকে আয়ের বিষয়ে সাংসদ বলেন, কৃষিজমিতে তিনি মৎস্য চাষ করে বছরে ২০ লাখ টাকা আয় করেছেন।