ভোটযুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের প্রার্থী

জাতীয় সংসদের কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া–মহেশখালী) আসনে জামায়াত প্রার্থীর বিরুদ্ধেই এবার লড়বে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন আশেক উল্লাহ রফিক। অপরদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা এ এইচ হামিদুর রহমান আযাদ। বিএনপি নেতা আলমগীর মো. মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ দলীয় মনোনয়ন পাননি। গতকালও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় দলীয় প্রতীকও পাবেন না তিনি। এ কারণে নির্বাচন থেকে সরে যেতে হবে তাঁকে।

এ প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলেও আলমগীর ফরিদের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেছে। কারণ বিএনপি থেকে হামিদুর রহমান আযাদকেই ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিতে বলা হয়েছে। আলমগীর ফরিদ আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিকের চাচা।

বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় দুটি দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া নিয়ে জাতীয় সংসদের কক্সবাজার-২ আসন। এ আসনের হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ১৭৭। এর মধ্যে মহেশখালীতে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৫৩ ও কুতুবদিয়ায় ৮৪ হাজার ৫২৪ ভোটার রয়েছেন। ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটারেরা এত দিন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কে হচ্ছেন—সেই জল্পনা-কল্পনায় ছিলেন। গতকাল রোববার থেকে শুরু হয়েছে ভোটের হিসাবনিকাশ। আশেকের বাড়ি মহেশখালীতে। আর হামিদ আযাদের বাড়ি কুতুবদিয়ায়। দুই প্রার্থীর সমর্থকেরাই নির্বাচনে তাঁদের জয় পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

গতকাল সকালে মহেশখালীর গোরকঘাটা জেটিঘাটে গিয়ে দেখা গেল ১০-১৫ জন যাত্রীর জটলা। তাঁরা হামিদ আযাদ আর আশেকের ভোটযুদ্ধ নিয়ে আলাপ করছিলেন। আমজাদ হোসেন নামে গোরকঘাটার ভোটার বললেন, ‘বিএনপির আলমগীর ফরিদ যদি আযাদের পক্ষে আন্তরিক হন তাহলে আশেকের জেতার সম্ভাবনা কম। কারণ এ আসনে বিএনপি-জামায়াতের ভোট বেশি।’

আরেক ভোটার কেফায়েত উল্লাহ বললেন, ‘ইউপি নির্বাচন নিয়ে মহেশখালী আওয়ামী লীগ তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। এর মধ্যে দুটি পক্ষ আশেকের বিরুদ্ধে। নির্বাচনে তাঁরা আশেককে সমর্থন জানালেও ভেতরে-ভেতরে কাজ নাও করতে পারেন।’

উপজেলার বড়মহেশখালী, ছোটমহেশখালী, হোয়ানক ইউনিয়ন ও মহেশখালী পৌরসভার গোরকঘাটা, চরপাড়া, পুটিবিলা গ্রাম ঘুরে ভোটারদের কাছ থেকে অনেক কথাই জানা গেল। এখানকার ভোটারেরা বলছেন, মহেশখালীতে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনালসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা দেখতে ভোটারেরা নৌকায় ভোট দেবেন। এ আসনে সংখ্যালঘু ভোটার আছেন প্রায় ৫০ হাজার।

ভোটারদের অনেকেই বলে, আশেক উল্লাহ বয়সে তরুণ, ভদ্র ও নম্র স্বভাবের। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। কর্মীরা কাজ করলে এবারও তাঁর জেতার সম্ভাবনা আছে। পাশাপাশি বিএনপির কেউ এই আসনে মনোনয়ন না পাওয়ায় দলটির অনেক নেতা-কর্মী হতাশ। আওয়ামী লীগ এই হতাশাকে কাজে লাগতে পারলে ভালো ফল আসবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, আলমগীর ফরিদকে প্রার্থী না করায় লাভবান হয়েছে আওয়ামী লীগ। কারণ আলমগীর ফরিদের সমর্থকেরা গোপনে নৌকায় ভোট দিতে পারেন। আলমগীর ফরিদ আশেক উল্লাহর চাচা। দুজনের বাড়িও পাশাপাশি।

জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তেই হামিদুর রহমান আযাদকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়েছে। যদিও তিনি কারাগারে বন্দী। দুয়েক দিনের মধ্যে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টভুক্ত সব দলই ধানের শীষের পক্ষে মাঠে নামবেন আশা করছি। এতে কারও হতাশ হওয়ার কারণ নেই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে বাকশাল প্রার্থী মোহাম্মদ ইসহাক ২ হাজার ৩৮২ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী মো. রশিদকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর একবার ছাড়া আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী জয়ের মুখ দেখেননি। তবে এবার তাঁরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী বলেন, হামিদ আযাদ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হওয়ায় তাঁদের সুবিধা হয়েছে। এখন নৌকার পক্ষে সব নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চলছে।