শেষ মুহূর্তে প্রার্থী হয়ে চমক দেখালেন বিমল

মনজুরুল ইসলাম ও কামরুন্নাহার
মনজুরুল ইসলাম ও কামরুন্নাহার

নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সর্বশেষ চমকটি দেখিয়েছেন মনজুরুল ইসলাম ওরফে বিমল। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এলাকাতেও তিনি বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশা না থাকায় তিনি ঐক্যফ্রন্টের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

কিন্তু গতকাল রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁকে এ–সংক্রান্ত নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিএনপির প্রার্থী কামরুন্নাহার নাটোরে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ঐক্যফ্রন্টের চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি হস্তান্তর করেন। এরই ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী হিসেবে ‘ধানের শীষ’ নিয়ে নির্বাচনের মনোনয়ন দেওয়া হয় মনজুরুল ইসলামকে। বাদ দেওয়া হয় কামরুন্নাহারের চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র।

শেষ মুহূর্তে মনজুরুল ইসলাম ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে লালপুর-বাগাতিপাড়ার বিএনপি শিবিরে আনন্দের ঝড় ওঠে। বিশেষ করে বিএনপির যে অংশটি এত দিন পটল (ফজলুর রহমান) বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল, তাঁরা এ খবরে মিষ্টি বিতরণ শুরু করেন। এ খবর লেখার সময় মনজুরুল ইসলাম ঢাকা থেকে নাটোরে আসছিলেন। মুঠোফোনে তিনি জানান, ‘আমি ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। তাই এখন বিএনপি, নাগরিক ঐক্য, জাসদ (রব), গণফোরামসহ ঐক্যফ্রন্টের সবাই আমার কাছে সমান। আমি সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’

>কামরুন্নাহার বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। একটু পরই ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনজুুরুলের নাম ঘোষণা করা হয়।

মনজুরুল ইসলামের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন লালপুর থেকে গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় জানান, মনোনয়নের খবর পেয়ে বিএনপির শত শত নেতা-কর্মী তাঁর ভাইকে স্বাগত জানাতে বনপাড়া বাইপাসে গেছেন। অচিরেই ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয় সভা করে নির্বাচনী প্রচারে নামবেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এই নেতা।

লালপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান জানান, মনজুরুল ইসলাম ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে জেতা আরও সহজ হবে। এখন সবাইকে বিভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তবে লালপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ জানান, ‘এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমরা ফজলুর রহমান পটলের স্ত্রী কামরুন্নাহারের চূড়ান্ত মনোনয়নের বিষয়টি জানতাম। এটা পরিবর্তন হওয়ায় অনেকেই বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন। ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

মনজুরুল ইসলাম ১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত লালপুর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত উপজেলা যুবদলের সভাপতি এবং ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পরে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের সঙ্গে মতবিরোধ সৃষ্টি হলে তাঁকে সংগঠন থেকে বাদ দেওয়া হয়। তিনি ১৯৯৬ সালে লালপুরের তৎকালীন গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। পরে গোপালপুর পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর ২০০০, ২০০৫ ও ২০১০ সালে মেয়র নির্বাচিত হন। সম্প্রতি তিনি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগে যোগদান করেন।