সিলেটে ছিটকে গেল জামায়াত

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও সিলেটে বিএনপির কাছ থেকে অন্তত দুটি আসন পাওয়ার আশা করেছিল জামায়াত। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো দলটির দুই প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে মনোনয়পত্রও জমা দিয়েছিলেন। তবে বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় দেখা গেল, সিলেটে জামায়াতকে একটি আসনও ছাড়া হয়নি। এ অবস্থায় সিলেটে জামায়াতের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিস্ময়ের পাশাপাশি হতাশও হয়েছেন।

২০০১ ও ২০০৮ সালে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) ও সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে নির্বাচন করায় একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এ দুটি আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সাবেক সাংসদ ফরীদ উদ্দিন চৌধুরী ও মাওলানা হাবিবুর রহমান। প্রথমে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি ছিল। তবে দলীয় চিঠি পেয়ে গত ২৮ নভেম্বর বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষের প্রতীকে মনোনয়নপত্রও দাখিল করেছিলেন। বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় ছিটকে পড়ল জামায়াত। এ দুটি আসনে ধানের শীষের প্রতীকে নির্বাচন করছেন বিএনপির নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক।

গতকাল দুপুরের দিকে সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপত্র দাখিল করা সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমান রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে মনোনয়নপত্র তুলে নেন। ফরীদ উদ্দিন জানান, এখন মনোনয়নপত্র না তুললেও আইন অনুযায়ী বাতিল হবে। এ জন্য তিনি আর মনোয়নপত্র তুলে আনতে যাননি।

বিগত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটভুক্ত হয়ে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেয় জামায়াত। ওই সময়ই জামায়াত প্রথম জয় পায় সিলেট-৫ আসনে। এ হিসাবে প্রায় দেড় যুগ পর জাতীয় কোনো নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গছাড়া হলো জামায়াত। ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও সাবেক সাংসদ মাওলানা ফরীদ উদ্দিন চৌধুরী। এর মধ্যে ২০০১ সালে তিনি জয়ী হন। বাকি চারবার হারেন।

বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা ফরীদ উদ্দিন চৌধুরীর। শেষ বেলায় কেন জামায়াত বাদ পড়ল—এমন প্রশ্নে গতকাল সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘আমাদের নিবন্ধন নেই। শুরুতে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতিতে ছিলাম। পরে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করতে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়। এরপর বিএনপি দলীয় প্রতীক ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করি। আজ সকালে শুনলাম চূড়ান্ত মনোনয়ন অন্যজনকে দেওয়া হয়েছে। আমরা আসলে কিছুই জানি না, কেন বাদ পড়লাম।’

জোটবদ্ধ হওয়ার পর সিলেট অঞ্চলে ভোটে বিএনপির সঙ্গছাড়া হওয়ার প্রথম ঘটনা ঘটে গত ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর মেয়র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপির কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায়ের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছিল। সে নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। জিতেছিলেন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী।

>দুটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও শেষ মুহূর্তে বাদ পড়লেন জামায়াতের সাবেক সাংসদসহ দুজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচনী এলাকার তিনজন বিএনপি নেতা বলেছেন, সিটি নির্বাচনে বিএনপির অনুরোধ সত্ত্বেও জামায়াত নির্বাচনের ব্যাপারে অনড় ছিল। তাঁরা বিএনপির প্রার্থীর বিপক্ষে নিজেদের প্রার্থীকে স্বতন্ত্র হিসেবে রেখে বিএনপিকেই মূলত ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। জাতীয় নির্বাচনের আগে সিলেটে ঠিক একই ধাক্কা জামায়াত খেল। এ ছাড়া বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও জামায়াতের দূরত্ব রয়েছে। এই টানাপোড়েনে জামায়াত প্রার্থীর ফলাফলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। এটি বিবেচনায় নিয়েই হয়তো বিএনপি সিলেটে জামায়াতের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি পরিবর্তন করেছে।

গত শনিবার বিকেল পর্যন্ত শোনা যাচ্ছিল, এবারও জামায়াতকে সিলেট জেলার দুটি আসন ছেড়ে দিতে বিএনপি রাজি আছে। স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও এ বিষয়টি ঢালাওভাবে প্রচার ছিল। তবে সন্ধ্যার পরই আকস্মিকভাবে পরিস্থিতি বদলে যায়। সিলেট-৬ আসনে ফয়সল আহমদ চৌধুরী ও সিলেট-৫ আসনে উবায়দুল্লাহ ফারুককে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয় বিএনপি। কেন্দ্রের এ অবস্থানে অনেক নেতা-কর্মী বিস্মিত ও আশ্চর্য হলেও তাঁরা জানান, জামায়াতকে বাদ দেওয়াটা বিএনপির ইতিবাচক ও চমৎকার একটি সিদ্ধান্ত। এতে এ দুটি আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন।

নির্বাচন সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. শাহজাহান আলী বলেন, ‘একটি আসনেও জামায়াতের প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন না-পাওয়ায় আমরা মর্মাহত। এটি হতাশাজনক। এমনটা আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত। তবে বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থেই এমন হয়েছে। এখানকার দলের কর্মী-সমর্থকেরা দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার সুযোগ পেল না। যা–ই হোক, আমরা মাঠে আছি, মাঠেই থাকব।’ সিটি নির্বাচনে বিএনপির অনুরোধ উপেক্ষার প্রভাব পড়ল কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না না। এমনটি হওয়ার কথা নয়। কারণ, সেটি ছিল স্থানীয় নির্বাচন। আর এখন হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। আসলে বৃহত্তর ঐক্যপ্রক্রিয়ার কারণে জোটের স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।’