নতুন মুখেই আস্থা বিএনপির

শেষ পর্যন্ত সিলেটে নতুনদের ওপরই বেশি আস্থা রাখল বিএনপি। জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতেই দলটি নতুন মুখের প্রার্থী দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সিলেটে একটি আসন ছাড়া বাকি সব আসনেই পুরোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। জাতীয় পার্টি যে দুটো আসনে মনোনয়ন দিয়েছে, তার দুটোই পুরোনো প্রার্থী। এ হিসেবে নতুনের সঙ্গে পুরোনোদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমজমাট হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।

গত শনিবার রাতে দলের পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থনে বিএনপি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেন। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় দেখা গেছে, সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর। এবারই প্রথমবারের মতো তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনের সাবেক সাংসদ খন্দকার মালিক তাঁর বাবা। সিলেট-১ আসনে ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। দলীয় চেয়ারপারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত গণসংযোগ করে আসছিলেন।

চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার পর গতকাল খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর বলেন, ‘এক হিসেবে আমি এখানে নতুন নই। ২০১৪ সালের ভোটকে সামনে রেখে মাঠে আছি। আমার বাবা এখানে বিএনপির সাংসদ ছিলেন। বাবার এই আসনে দল বিশ্বাস ও আস্থা রেখে আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে। আমি দলের এই আস্থার মূল্যায়ন রাখতে চাই।’

সিলেট-১ আসনে যে দলের প্রার্থী জেতেন, সে দলই নাকি ক্ষমতায় যায়, এমন একটি জনশ্রুতি বহুদিন ধরেই প্রচলিত রয়েছে। এবার এই আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে এ কে আবদুল মোমেনকে। তিনি আসনটির বর্তমান সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই।

সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির ‘নিখোঁজ’ সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। এবারই প্রথম মনোনয়ন পাওয়ায় ভোটের মাঠে তিনি একেবারেই নতুন। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।

সংসদীয় এলাকার দুই উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যানদের বেশির ভাগই বিএনপি ঘরানার। এ সুবিধা আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও পাওয়া যাবে বলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মনে করছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাপাকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তৎকালীন সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী। এরপর সেখানে স্বতন্ত্র এক প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত হন জাপার মো. ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী। এবারও তাঁকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

তাহসিনা রুশদী বলেন, ‘নির্বাচন আমার কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়। এর আগেও আমি স্বামীর সঙ্গে বিগত নির্বাচনে মাঠে থেকেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি করেছি। নেতা-কর্মীদের চাওয়ার কারণেই এ আসনে আমার প্রার্থী হওয়া।’

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী। তিনি ২০০১ সালে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ হয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ–উস–সামাদ চৌধুরীর কাছে হেরেছিলেন। এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ মাহমুদ–উস–সামাদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে।

সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম। তিনি ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়নে এ আসন থেকে সাংসদ হয়েছিলেন। এবারও আওয়ামী লীগ পুনরায় ইমরান আহমদকেই মনোনয়ন দিয়েছে।

সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে বিএনপি চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুককে। দলটির প্রবীণ এই নেতা দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে ছিলেন। তবে এবারই প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ আসনে মহাজোটের একক প্রার্থী নির্ধারিত হয়নি। জাপা নেতা সেলিম উদ্দিন দলীয় মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ দলটির সাবেক সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদারকে মনোনয়ন দিয়েছে।

সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফয়সল আহমদ চৌধুরী। তিনি এবারই প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সিলেট জেলা শাখার সাবেক সভাপতি। আর এ আসনে আওয়ামী লীগ পুনরায় মনোনয়ন দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে।

ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘জোটগত নির্বাচনের কারণে ১৯৯১ সালের পর থেকে এ আসনটি ধানের শীষ প্রতীকশূন্য ছিল। এবার নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক ফিরে পাওয়ায় মানুষজন এখন ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। আমি এলাকাবাসীর সব ধরনের প্রত্যাশা পূরণে মাঠে রয়েছি।’