ত্রাণের টাকায় অস্ত্র-বিস্ফোরক কিনেছে জঙ্গিরা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নামে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া থেকে আসা ত্রাণের টাকায় জঙ্গিরা অস্ত্র ও বারুদ কিনছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা। বুধবার সন্ধ্যায় কমমলাপুর স্টেশন এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ওই তিনজনের কাছ থেকে ৩০টি বোমার খোল, ৩০টি কমান্ডো চাকু, দেড় কেজি বিস্ফোরক, একটি করে চাপাতি ও দোধারি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন আবদুল হাকিম, নোমান ও শফি। তিনজনেরই বাড়ি কক্সবাজারে। এঁদের মধ্যে হাকিম কক্সবাজার অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। আগে তিনি ইসলামি বই বিক্রি করতেন, এখন অটোরিকশা চালান। তাঁর মাধ্যমেই জেএমবিতে যুক্ত হন গ্রেপ্তার নোমান।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিদের হাতে এর আগেও এ ধরনের অস্ত্র বহুবার ব্যবহৃত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। উদ্ধার হওয়া ছুরিগুলো সাধারণত সম্মুখসমরে (ক্লোজ কমব্যাট) ব্যবহার করে থাকেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে এ অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালে ঢাকার গাবতলীতে পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম হত্যা ও আশুলিয়ায় পুলিশের কনস্টেবল মুকুল হোসেন হত্যায় এ ধরনের ছুরি ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের আরেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. রহমতউল্লাহ বলেন, ওই দলের কাছ থেকে দেড় কেজি বিস্ফোরক ও ৩০টি বোমার খোল (আইইডি কনটেইনার) উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো দিয়ে ধ্বংসাত্মক বোমা তৈরির চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। জঙ্গিরা যে রকম হাতে তৈরি গ্রেনেড ব্যবহার করে, ওই খোলগুলো সে রকমভাবেই পাইপ কেটে বানানো। নির্বাচন ঘিরে তাঁরা নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া খ্রিষ্টীয় নববর্ষের (থার্টি ফার্স্ট) রাতে কক্সবাজারে ‘কিছু একটা’ করার পরিকল্পনাও ছিল তাঁদের।

অর্থায়ন: কর্মকর্তারা জানান, মালয়েশিয়া ও সৌদিপ্রবাসী দুজনের মাধ্যমে জেএমবির একটি দল অর্থ পাচ্ছে বলে জানা যায়। সেই সূত্র ধরেই ওই তিনজনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।


কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ ও অর্থ সাহায্যের কথা বলে তোলা টাকা কক্সবাজারে এঁদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে ব্যয় করা হচ্ছে। এর মধ্যে সৌদিপ্রবাসী ওই ব্যক্তিই এই জঙ্গিদের প্রায় এক কোটি টাকা দিয়েছেন। ওই প্রবাসী জঙ্গি অর্থায়নকারী ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমানের আত্মীয় বলে কর্মকর্তারা জানান। ওই টাকা পেয়ে হাকিমের মতো লোকেরা জঙ্গি সংগঠনের জন্য সদস্য ও অস্ত্র–বারুদ সংগ্রহের কাজ করছেন। ওই টাকা দিয়েই ছুরিগুলো মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের দিয়ে কিনিয়েছেন গ্রেপ্তার হওয়া হাকিম। এ থেকে ধারণা করা যায়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজেদের সমর্থক বাড়িয়েছেন জঙ্গিরা।