স্ত্রী, স্বজন আর নিজের টাকায় নির্বাচন

>

নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে দুই জোটের প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের নানা চিত্র মিলেছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন এবার নিজের টাকায় নির্বাচন করবেন। চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের প্রার্থী গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর নির্বাচনী খরচ সাড়ে ২৪ লাখ টাকা। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী নুরুল আমিন চাচাতো ভাইসহ তিনজনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে নির্বাচন করবেন। তিনি নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ করবেন নির্বাচনে।  

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে দুই বড় জোটের প্রার্থীদের কেউ নিজের টাকায়, কেউ স্ত্রীর টাকায় আবার কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচন করবেন। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে নৌকার প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আজিম উল্লাহ বাহার—দুজনই নিজের টাকায় নির্বাচন করবেন। তাঁরা ২৫ লাখ টাকা করে খরচ করবেন।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ মাহফুজুর রহমান স্ত্রীর কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা ধার নেবেন। নিজের আয় থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করবেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তফা কামাল পাশা নিজের সঞ্চয় থেকে ১৪ লাখ টাকা খরচ করবেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আওয়ামী লীগের দিদারুল আলম নিজের ২৪ লাখ টাকায় নির্বাচন করলেও প্রতিদ্বন্দ্বী ইসহাক চৌধুরী দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নেবেন। নিজের টাকা রয়েছে ২ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম-৫ আসনে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নির্বাচনী খরচ মেটানোর জন্য স্ত্রী পারভীন মাহমুদের কাছ থেকে নেবেন ১০ লাখ টাকা। জাতীয় পার্টির এই প্রার্থী নিজে খরচ করবেন ১৫ লাখ টাকা। প্রতিদ্বন্দ্বী কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম নিজের সঞ্চয় থেকে নির্বাচনী ব্যয় করবেন।

চট্টগ্রাম-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী নিজের ব্যবসা খাত থেকে নির্বাচনে ১৫ লাখ টাকা খরচ করবেন। তবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী জসিম উদ্দিন সিকদার নির্বাচনী ব্যয়ের ১৬ লাখ টাকা নেবেন ভগ্নিপতি, স্ত্রীর বড় ভাইদের কাছ থেকে।

নিজের ও স্ত্রীর জমা সাড়ে ১০ লাখ টাকা এবং দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নির্বাচনে ব্যয় করবেন চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাছান মাহমুদ। এই আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এলডিপির নুরুল আলম নির্বাচনী ব্যয়ের ১৫ লাখ টাকার ১০ লাখ টাকা নেবেন প্রবাসী ভাই ও ভাগনের কাছ থেকে। আর বাকি ২ লাখ টাকা নিজের আয় থেকে এবং আরেকজনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নেবেন তিনি।

সাংসদ হিসেবে পাওয়া সম্মানীর ১০ লাখ টাকা এবং মেয়ের জামাইয়ের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে এবারের নির্বাচন করবেন চট্টগ্রাম-৮ আসনে মহাজোটের প্রার্থী মইন উদ্দিন খান বাদল। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আবু সুফিয়ান নিজের তহবিল থেকে ২৫ লাখ টাকা খরচ করবেন।

চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নির্বাচনী ব্যয়ের ২৫ লাখ টাকার মধ্যে মা ও স্ত্রী দেবেন ১০ লাখ টাকা। বাকি ১০ লাখ টাকা নিজের আইন পেশা থেকে খরচ করবেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি শাহাদাত হোসেনের ২৫ লাখ টাকার মধ্যে নিজে দেবেন ২০ লাখ টাকা। বাকি ৫ লাখ টাকা দেবেন বোন ও মামা।

নিজের টাকায় নির্বাচন করবেন চট্টগ্রাম-১০ আসনে মহাজোটের প্রার্থী আফছারুল আমীন ও বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম-১২ আসনে আওয়ামী লীগের সামশুল হক চৌধুরী ও বিএনপি প্রার্থী মো. এনামুল হক, চট্টগ্রাম-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১১ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিজ তহবিল থেকে ১৫ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়ে নির্বাচনে ব্যয় করবেন।

চট্টগ্রাম-১৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজাম নিজের ব্যবসা থেকে ১৩ লাখ টাকা, ছেলের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা, মামাতো ভাইদের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা নেবেন নির্বাচনে ব্যয় করার জন্য।

চট্টগ্রাম-১৪ আসনের প্রার্থী এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ নির্বাচনে ব্যয়ের জন্য ৩১ জনের কাছ থেকে ১৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা নেবেন। নিজের থেকে খরচ করবেন ৫০ হাজার টাকা।  

চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী ও জামায়াত নেতা আ ন ম শামসুল ইসলাম নিজের চাকরি থেকে পাওয়া ৭ লাখ টাকা, দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা এবং দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়ে নির্বাচনে ব্যয় করবেন।

চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে কর্মীরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেবেন ৩ লাখ টাকা। ভাইয়ের থেকে নেবেন ২ লাখ টাকা। আর নিজের থেকে খরচ করবেন ১৫ লাখ টাকা।