'এই আসনোত এবার ভোট জমবে'

‘অনেক নাটকের পর ভোট তো হচ্ছে। শেষমেশ নৌকা, ধানের শীষ ও লাঙ্গল—এই তিনটা মার্কায় থাকিল। হাটবাজারসহ সব জায়গাত ভোটের গল্প। কায় জিতবে হিসাব-নিকাশের শেষ নাই।’ কথাগুলো রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনের পায়রাবন্দ ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকার সবজি ব্যবসায়ী কবির মিয়ার (৫২)।

শুধু কবির মিয়া নন, ওই এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম, সবজিচাষি রফিকুল ইসলাম, এন্তাজ মিয়া, কৃষাণী রাহেলা বেগম, আলিজন নেছাসহ আরও অনেকের কাছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা একই ধরনের মন্তব্য করেন।

রংপুরের দ্বিতীয় বৃহত্তম নির্বাচনী এলাকা হলো মিঠাপুকুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৫ আসন। মিঠাপুকুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪১৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৩৮ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৭৬ জন।

মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের আলীপুর, ইকবালপুর, পাহাড়পুর, পায়রাবন্দ ইউনিয়নের খোর্দ মুরাদপুর, ইসলামপুর, কেশবপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকায় গিয়ে জানা যায়, মনোনয়নপত্র যাছাই-বাছাইয়ের পর ধানের শীষের এক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও উপজেলা জামায়াতের আমির গোলাম রব্বানী ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে চলে এসেছেন। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ফখর উজ জামান জাহাঙ্গীরও আছেন। প্রথম দিকে ভোটারদের অনেকে মনে করেছিলেন, এবার নৌকার প্রার্থী আশিকুর রহমান সহজেই জয়ী হয়ে যাবেন। কিন্তু শেষমেশ নৌকার সঙ্গে ধানের শীষ ও লাঙ্গল মার্কার প্রার্থীও লড়াইয়ের মাঠে শামিল হলেন। তাই সবার মুখে একই আলোচনা, নির্বাচন বেশ জমবে। জয়-পরাজয় কী হবে, তা বলা মুশকিল।

পায়রাবন্দ ইউনিয়নের খোর্দ মুরাদপুর এলাকায় রোকেয়া দিবস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী মেলা মঙ্গলবার শেষ হয়। বেলা ১১টার দিকে এই মেলায় ঘুরতে আসা অনেকের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়।

পায়রাবন্দ স্মৃতিকেন্দ্র হলেও এখানে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এমন অভিযোগ তুলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রংপুর কারমাইকেল কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণ হইলেও এখানে কিছু নেই। পাঠাগার থাকলেও পড়ার বই নেই। দেখারও তেমন কিছু নাই। কিন্তু অনেক আশা ছিল, এই সরকারের আমলে ভালো হবে।’

পায়রাবন্দ ইউনিয়নের পাশের ইউনিয়ন কাফ্রিখালের আলীপুর এলাকার ষাটোর্ধ্ব কৃষক সোলায়মান মিয়া বলেন, ‘হামার এলাকার রাস্তাঘাটের তেমন কোনো উন্নয়ন হয় নাই। রাস্তাগুলা ভাঙা। হামারগুলার যায় সব সময় খবর নেয় তাঁকে এবার ভোট দেমো। সেটা যেমন মানুষই হউক না কেন?’ তাঁর ভাষ্য, ‘এই আসনোত এবার ভোট জমবে’।

এই আসনে বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এইচ এন আশিকুর রহমান প্রায় ২৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। আশিকুর পান ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৪ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এস এম ফখর উজ জামান জাহাঙ্গীর ভোট পান ১ লাখ ৩৪৮। সেখানে জামায়াতের প্রার্থীর ভোট ছিল ৫৬ হাজার।

এবার ধানের শীষ মার্কায় বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ভোট করছেন উপজেলা জামায়াতের সাংগঠনিক আমির গোলাম রব্বানী। এখানে নৌকা, লাঙ্গল ও ধানের শীষের জোর লড়াই হবে, এমন মত বেশির ভাগ ভোটারের।