তানসেনের নৌকায় নেই আওয়ামী লীগ নেতারা

বগুড়া-৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন ভোট চাইছেন। গতকাল কাহালু উপজেলার জামগ্রাম হাটে।  প্রথম আলো
বগুড়া-৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন ভোট চাইছেন। গতকাল কাহালু উপজেলার জামগ্রাম হাটে। প্রথম আলো

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) বর্তমান সাংসদ এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন এবার মহাজোটের প্রার্থী। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। তবে নৌকার প্রার্থী তানসেনের সঙ্গে নেই আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী।
আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, তানসেন পাঁচ বছর ধরে শরিক দলের সাংসদ। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীর খোঁজ নেননি। এখনো যোগাযোগ রাখছেন না।
এ আসনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নৌকা প্রতীক তুলে দেন মহাজোটের শরিক জাসদের সাংসদ রেজাউল করিম তানসেনের হাতে। গতবার তিনি মশাল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাংসদ নির্বাচিত হন। মশালের প্রার্থীকে নৌকার প্রতীক দেওয়ায় এমনিতেই হতাশ আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা। এখন নৌকা পেয়েও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখছেন না বলে তাঁরা ক্ষুব্ধ।
এ আসনে ২০০৮ সালে মহাজোটের (জাসদ) প্রার্থী তানসেন নৌকা প্রতীকে ভোট পান ৭৫ হাজার ৯৯১ ভোট। ২০০১ সালে জাসদ থেকে মশাল প্রতীকে ২ হাজার ৭৭৮ ভোট পান তিনি। আসনটি ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মহাজোট জাপার নুরুল আমিনকে ছেড়ে দেয়।
কিন্তু মাঠে থাকেন জাসদের তানসেন। নির্বাচনে ২ লাখ ৮৩ হাজার ২৪০ ভোটারের মধ্যে ভোট দেন মাত্র ৩৫ হাজার ৬৯২ জন। এর মধ্যে তানসেন পান ২২ হাজার ২০৩ ভোট। নুরুলকে হারিয়ে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।
কুন্দারহাটে একটি চায়ের দোকানে কথা হয় একই গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তো নৌকা মশালের প্রার্থীকে ভাড়া দিয়েছে। নিজ দলের কোনো প্রার্থী নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করলে তাঁর আলাদা দরদ থাকত। কিন্তু ভাড়া দেওয়ার কারণে নৌকার প্রতি তানসেনের দরদ নেই। ভোটারের কাছে আসতে হবে। নইলে জামানত হারানোর শঙ্কা রয়েছে। এবারে তো ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ নেই।
নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় মাঝগ্রাম এলাকার ভোটার ও রিকশাচালক ছলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে সাংসদ তানসেনকে তিন থেকে চারবার এলাকায় দেখেছেন তিনি। জনগণের সঙ্গে ছিলেন না তিনি। ব্যক্তিগত কাজে এসে আবার ঢাকায় চলে গেছেন।
এলাকার অন্তত ২৫ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত নির্বাচনে তানসেন ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছেন। নির্বাচনের পর তিনি সাধারণ ভোটারের কোনো খোঁজ নেননি। অথচ কয়েক বছর আগেও হাটের ইজারাদারি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন রিকশা-ভ্যানে চড়ে এলাকায় ঘুরতেন। এখন কোটি পতি বনেছেন। দামি গাড়ি ও বাড়ির মালিক হয়েছেন।
নির্বাচনে প্রচার শুরু হলেও তানসেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এড়িয়ে চলছেন বলে দাবি করেন নন্দীগ্রাম উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি এম আর জামান। তিনি বলেন, ‘প্রতীক পাওয়ার তিন দিন কেটে গেল। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করছেন না। মশালের প্রার্থীর হাতে নৌকা তুলে দেওয়া হয়েছে। হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নৌকার ভোট করার জন্য প্রস্তুত আমরা।’
নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন বলেন, এই আসনে জাসদের ১০ হাজার নিজস্ব ভোটও নেই। নৌকার ভোট পেতে হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে প্রচারণা চালাতে হবে।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক আবু সাইদ বলেন, ‘মহাজেটের শরিক হলেও পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীর খোঁজখবর নেননি তানসেন। আমরা নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তাঁকেও এগিয়ে আসতে হবে।’