মহাজোটেই জট, দুশ্চিন্তায় প্রার্থীরা

রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ কারণে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ ও জাসদের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়ে পৃথকভাবে নির্বাচন করছেন। এতে দলীয় ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনে জয়লাভ করা তাঁদের জন্য কঠিন হবে। বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ওই তিন প্রার্থী। তবে মহাজোটের তিন প্রার্থী থাকায় সুবিধাজনক অবস্থায় বিএনপির প্রার্থী।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬-২০১৪ সাল পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনী ফলাফল অনুযায়ী এই আসনে তিনবার জাতীয় পার্টি ও একবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হন। এর মধ্যে তিন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাই পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। ভোটের ব্যবধানও ছিল অনেকটা কাছাকাছি। এই হিসাবে আসনটিতে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের ভোট সবচেয়ে বেশি। বিএনপির অবস্থান ছিল অনেক দুর্বল। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ আবুল কালাম মো. আহসানুল হককেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে এখন মাঠে প্রচারে নেমেছেন। এরশাদের জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন আসাদুজ্জামান চৌধুরী। আর মশাল প্রতীক নিয়ে জাসদের প্রার্থী হয়েছেন কুমারেশ রায়। তাঁরা তিনজনেই আশা করেছিলেন, রংপুর-২ আসনে মহাজোটের প্রার্থী দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত মহাজোটের পক্ষ থেকে আসনটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
ওই তিন দলের নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাজোটের পক্ষ থেকে এলাকায় একক প্রার্থী ঘোষণা করা হলে তিন দলের সমর্থক ভোটারদের ভোট একই প্রতীকে পড়ত। এতে ওই প্রার্থীর পক্ষে জয়ী হওয়াটা অতি সহজ হত। কিন্তু এখন তা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, মহাজোটের শরিক দলের তিন প্রার্থী এলাকার সমর্থিত ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পরস্পরের দোষ–ত্রুটি তুলে ধরে কথা বলছেন। এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত বিএনপির প্রার্থী সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী সরকার (ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সাংসদ আনিছুল ইসলাম মণ্ডলের (সিংহ) অবস্থান আরও ভালো হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিছুল ইসলামকে নিয়ে বর্তমানে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদের প্রার্থীরা। কারণ, সরকারবিরোধী ভোট এবং দলীয় কোন্দলের কারণে নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের ভোট ওই দুই প্রার্থীর প্রতীকে পড়বে। রংপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল রয়েছে।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ পাঁচজন অনুসারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মহাজোটের একক প্রার্থী হতে অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আবুল কালাম মো. আহসানুল হক অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ, এখানে নৌকা ও লাঙ্গলের ভোট সবচেয়ে বেশি। একক প্রার্থী হলে ভোটগুলো একই প্রতীকে পড়ত।
জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘রংপুর-২ আসনে মহাজোট থেকে আমাকেই প্রার্থী করার পাকাপোক্ত সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহাজোটের পক্ষে আসনটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তবু সমস্যা নেই।
এ বিষয়ে বদরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি উত্তম কুমার সাহা বলেন, ‘মহাজোটের একক প্রার্থী হলে ভোটে সেই প্রার্থীকে জেতানো অতি সহজ হতো। তবু এখন দুশ্চিন্তা করছি না আমরা।’
জাসদের প্রার্থী কুমারেশ রায় বলেন, ‘মহাজোটের তিন প্রার্থীর চাপাচাপিতে বিএনপির প্রার্থী এখানে ফাইটে আছেন।’
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর–২ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির আনিছুল ইসলাম মণ্ডল ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৭১ ভোট পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৩৬ হাজার ৫৭৮। ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার ৯১ হাজার ৮৯১ ভোট পেয়ে সাংসদ হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আনিসুল হক চৌধুরী। তিনি ৭৮ হাজার ১৬৪ ভোট পেয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ নিজেই ওই আসনে ভোট করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৯২৯। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রয়াত আনিসুল হক চৌধুরী। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে ওই আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক।