আবারও মুখোমুখি চারজন

পঞ্চানন বিশ্বাস, আমীর এজাজ খান, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, গোলাম পরওয়ার
পঞ্চানন বিশ্বাস, আমীর এজাজ খান, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, গোলাম পরওয়ার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি আসন থেকে বিভিন্ন জোট ও দলের ৩৫ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুটি আসনে চারজন প্রার্থী একে অন্যের পুরোনো প্রতিপক্ষ। দীর্ঘদিন পর এবার খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) ও খুলনা-৫ (ফুলতলা, ডুমুরিয়া ও গিলাতলা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের প্রার্থীদের পুরোনো লড়াইটা আবার ফিরে এসেছে।
খুলনা-১ আসনে ১৭ বছর পর ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সাংসদ পঞ্চানন বিশ্বাস ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান। সর্বশেষ ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে এই দুই নেতা এ আসন থেকে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এবারও পঞ্চানন বিশ্বাস নৌকা প্রতীকে ও আমীর এজাজ খান ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা–১ আসন থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ৪৩ হাজার ৮৪৯ ভোটের ব্যবধানে সিপিবি প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাসকে পরাজিত করেন। ওই নির্বাচনে বিএনপি তৃতীয় অবস্থানে ছিল। পরে শেখ হাসিনা আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ। পঞ্চানন বিশ্বাস ওই উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেলিভিশন প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। পরে পঞ্চানন আবার আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে ৭৮ হাজার ৫৫২ ভোট পেয়ে বিএনপি জোটের প্রার্থীকে পরাজিত করেন।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোটের হয়ে প্রথমবারের মতো ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন আমীর এজাজ খান। তিনি ৪৭ হাজার ৫২৩ ভোট পান। এর আগে বিএনপির কোনো প্রার্থী এ আসনে এত বেশি ভোট পাননি। সেবারই প্রথম বিএনপি আসনটিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আসে।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি পঞ্চানন বিশ্বাস। সেবার নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে ননী গোপাল মণ্ডল ১ লাখ ২০ হাজার ৮০১ ভোট পেয়ে জয়ী হন। সেবারও ননী গোপালের প্রতিন্দ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন আমীর এজাজ খান। ভোট পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৪২০টি।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের নির্বাচন বর্জন করায় খুলনা-১ আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিল না। তবে ওই আসনে নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পঞ্চানন ৬৬ হাজার ৯০৪ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ননী গোপাল মণ্ডল ৩৪ হাজার ৫২৭ ভোট পান।
সব মিলে এর আগে পঞ্চানন বিশ্বাস তিনবার সংসদ নির্বাচন করে প্রতিবারই জিতেছেন। আমীর এজাজ খান দুবার নির্বাচন করে কোনোবারই জিততে পারেননি।
খুলনা-৫ আসনে এবার নৌকা প্রতীকে মাঠে রয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং বর্তমান সাংসদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। আর ধানের শীষ প্রতীকে মাঠে রয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণ চন্দ্র বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দুই প্রার্থী সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেই লড়াইয়ে নারায়ণ চন্দ্র নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬০০ এবং দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার ১ লাখ ৫ হাজার ৩১২ ভোট পান। ৩৯ হাজার ২৮৮ ভোটের ব্যবধানে জেতেন নারায়ণ চন্দ্র। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে ছিলেন গোলাম পরওয়ার। সেবার নারায়ণ চন্দ্র ১ লাখ ১ হাজার ১৯২ ভোট পান। গোলাম পরওয়ার ১ লাখ ৫ হাজার ৭৪০ ভোট। তিনি ৪ হাজার ৫৪৮ ভোটের ব্যবধানে প্রথমবারের মতো জয়ী হন।