প্রার্থীদের ওপর হামলা অব্যাহত

সাতক্ষীরা-১ আসনে নির্বাচনী গণসংযোগকালে বিএনপির প্রার্থী ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা। গতকাল কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সামনে।  ছবি: সংগৃহীত
সাতক্ষীরা-১ আসনে নির্বাচনী গণসংযোগকালে বিএনপির প্রার্থী ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা। গতকাল কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সামনে। ছবি: সংগৃহীত

ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা অব্যাহত আছে। গভীর রাতে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিএনপির নির্বাচনী ও দলীয় কার্যালয়। ধানের শীষের পোস্টার টাঙানোই যাচ্ছে না। লাগালেই নামিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ও গতকাল শুক্রবার চার জেলায় এসব হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এসবের প্রতিকার চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে ধানের শীষের প্রার্থীদের অভিযোগ।
সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের বিএনপির প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ওপর হামলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সামনে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিনিসহ ১০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা বিএনপির কার্যালয় এবং দলীয় প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় ও দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
একই রাতে মেহেরপুরের গাংনীতে ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণা কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ধানের শীষের সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে যশোরের চৌগাছায়।
এর আগে গত বুধবার খুলনা নগরের খালিশপুর এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগের সময় হামলার শিকার হন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী মুজ্জাম্মিল হক। একই দিন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে গণসংযোগকালে ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর নেতা মো. আবদুল আলীমের ওপর হামলা চালানো হয়।
আমাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

সাতক্ষীরা
কলারোয়া বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন সাতক্ষীরা-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কলারোয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বজলুর রহমান, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ হোসেন, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তাওফিকুর রহমান, পৌর কৃষক দলের সভাপতি বি এম সিরাজ, কলারোয়া পৌর বিএনপির সভাপতি কামারুল ইসলাম, নাঙ্গলঝাড়া ইউপি যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান . উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি মোজাম হোসেন ও বিএনপির কর্মী রুহুল আমিন রুবেল।
বিএনপির প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম জানান, দুপুর ১২টার দিকে কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সামনের বাজারে গণসংযোগ করছিলেন তিনি। হঠাৎ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা পেছন দিক থেকে এসে লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে তিনিসহ ১০ জন আহত হন। এর মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ এ ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, বিএনপির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। হাবিবুল ইসলাম গত পাঁচ বছর এলাকায় আসেননি। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপির একটি পক্ষ মেনে নিতে পারেনি। এরই জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

চুয়াডাঙ্গা
জীবননগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা বিএনপির কার্যালয় এবং দলীয় প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় ও দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে উল্লাস করে।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের ধারে পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে উপজেলা বিএনপির কার্যালয় অবস্থিত। কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হতেই পোড়া গন্ধ নাকে লাগে। বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মী আগের রাতে পুড়ে ভস্মীভূত মোটরসাইকেলসহ নির্বাচন উপকরণের ধ্বংসাবশেষ দেখছেন।
এ সময় পৌর বিএনপির সভাপতি শাহাজাহান কবীর বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একদল দুর্বৃত্ত উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী মাহমুদ হাসান খানের নির্বাচনী প্রধান কেন্দ্রের সামনে আসে। তাঁরা কার্যালয়ের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে দুটি দামি মোটরসাইকেল, দুটি টেলিভিশন, চেয়ার-টেবিল, নির্বাচনী পোস্টার, প্রচারপত্র ও আসবাব পুড়ে যায়।
শাহাজাহান কবীর বলেন, একই রাতে পৌর এলাকার লক্ষ্মীপুর ও গোপালনগরে আগুন দিয়ে দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এসব অপকর্ম করায় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে জীবননগর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আবদুল লতিফ দাবি করেন, এবার জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত করতে জামায়াত-শিবিরের কিছু ক্যাডার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর কার্যালয় ভাঙচুর, হামলা ও অগ্নিসংযোগ করছে।’
তবে জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি রুহুল আমীন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এই ধরনের বানোয়াট কথাবার্তা আওয়ামী লীগের লোকজন যত দিন বলবে, দেশে তত দিন অশান্তি থাকবে।’
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ড ও আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের খবর জেনেছি। তবে কোনো পক্ষই লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মেহেরপুর
গাংনীর মটমুড়া ইউনিয়নের বাউট বাজারে স্থাপিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জাভেদ মাসুদের নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, আটজনের একটি দল মোটরসাইকেলে করে এসে বিএনপির কার্যালয় ঘেরা ত্রিপল টেনে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে।
মেহেরপুর-২ আসনের প্রার্থী জাভেদ মাসুদ জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে মটমুড়া ইউনিয়নের বাউট বাজারে নির্বাচনী কার্যালয়টি স্থাপন করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সেটি পুড়িয়ে দেওয়া হলো। এর আগে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা করে আসবাব ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এসব বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একাধিক অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। গাংনী থানার ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

যশোর
চৌগাছা উপজেলা সদরে ধানের শীষ প্রতীকের সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাতে পৌর শহরের বিভিন্ন সড়কে টাঙানো এসব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ ব্যাপারে যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মোহাম্মদ শাহাদৎ হুসাইন গতকাল শুক্রবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুল আলমের কাছেও দেওয়া হয়েছে।