স্ব-আরোপিত নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকেরা

বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাংবাদিকদের অনেকেই জানিয়েছেন, এযাবৎকালের সবচেয়ে কঠোর গণমাধ্যম আইনের কারণে তাঁরা একটি ভয়ের পরিবেশের মধ্যে আছেন। এ জন্য অনেকে ‘স্ব–আরোপিত’ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কাজ করছেন।

বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা, ডিজিটাল গণমাধ্যম ও টেলিভিশনের ৩২ জন সাংবাদিক ও সম্পাদকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত বৃহস্পতিবার তাদের প্রকাশিত খবরে এ কথা জানিয়েছে।

খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইনে নিষ্ঠুর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বব্যাপী উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কুড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশে বাধা ও ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ করছেন সমালোচকেরা।

সাক্ষাৎকার দেওয়া সম্পাদক ও সাংবাদিকদের একটি বড় অংশই বলেছেন, নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানহানি–সংক্রান্ত বিধিবিধান সাম্প্রতিক কালে কঠোর করায় গণমাধ্যমে আতঙ্কের পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে মানহানির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় অনেক সাংবাদিককে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টার অভিযোগ নাকচ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত অক্টোবরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আশ্বস্ত করে বলেন, যেসব সাংবাদিক ভুয়া খবর ছাপবেন না, তাঁদের চিন্তার কারণ নেই।

সাংবাদিকেরা এই সময়ে এসব আইন করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বিশেষত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে ঢাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। এসব আইনের ফলে নির্বাচনের সময় স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশনে তাঁদের সক্ষমতা হ্রাস পাবে।

সাংবাদিকদের মধ্যে এখন স্ব-আরোপিত নিয়ন্ত্রণ দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘একজন প্রতিবেদক দিনের পর দিন পরিশ্রম করে একটি প্রতিবেদন তৈরির পরও যখন সেটা আমি ছাপতে পারি না, তখন সম্পাদক হিসেবে আমার খারাপ লাগে। কিন্তু প্রতিবেদককে রক্ষার স্বার্থে আমাকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কেননা, এটি প্রকাশের ঝুঁকি সম্পর্কে আমি জানি।’

ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘আগে কোনো উদ্বেগ ছাড়াই আমি নিয়মিত কলাম লিখতাম। কিন্তু এখন লিখি কদাচিৎ।’

তবে সাংবাদিকদের ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। তিনি বলেন, মাঠে যা ঘটছে, সাংবাদিকেরা তা লিখতে পারেন। কিন্তু সত্য বিকৃত করা থেকে তাঁদের বিরত থাকতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।