নির্মাণব্যয় ওঠার পরও টোল আদায় কেন অবৈধ নয়

নির্মাণব্যয় উঠে যাওয়ার পরও দিনাজপুরের মোহনপুর সেতুসহ সারা দেশের যেসব সেতুতে টোল আদায় করা হচ্ছে, তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। গত বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
রুলে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৬ জুলাই প্রথম আলোয় ‘মোহনপুর সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধের দাবি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর জনস্বার্থে হাইকোর্টের আইনজীবী মো. রাজ্জাকুল কবির মোহনপুর সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ রুল জারি করা হয়। একই সঙ্গে মোহনপুর সেতুর টোল আদায়কারী ইজারা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাব দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
রিট দায়েরকারী আইনজীবী রাজ্জাকুল কবির বলেন, ২৬ জুলাই প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ ছিল, দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের মোহনপুর নামক স্থানে আত্রাই নদের ওপর ১৯৯০ সালে ২২৩ দশমিক ৬০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। সেতুটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছিল ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ওই বছরের ৫ আগস্ট থেকে সেতুটি থেকে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত সেতুটি থেকে টোল আদায় বাবদ আয় হয়েছে ১৮ কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।
ওই সময় সেতু থেকে টোল আদায় সম্পর্কে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী টোল আদায়ের নীতিমালা সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেছিলেন যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ফেরির স্থলে নির্মিত সেতু এবং ২০০ মিটারের অধিক স্থায়ী সেতু টোল আদায়যোগ্য স্থাপনা। মোহনপুর ঘাটে সরকারিভাবে ফেরি চলত, তাই নীতিমালা অনুযায়ী টোল তোলা হচ্ছে। কিন্তু তিনি মোহনপুর ঘাটে ফেরি চলাচলের দালিলিক তথ্য দিতে পারেননি। এলাকাবাসী বলেছেন, মোহনপুর ঘাটে কখনো ফেরি চলত না।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জেলা সমন্বয় সভায় মোহনপুর সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে টোল আদায় বন্ধে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন।
রাজ্জাকুল কবির বলেন, প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদটি দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর মোহনপুর সেতু থেকে টোল আদায় কেন বন্ধ করা হবে না এবং টোল আদায়কারীর ইজারা কেন বাতিল করা হবে না, তা চার সপ্তাহের মধ্যে জানাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক, রংপুর জোনের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী, দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী, ইজারাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ নয়জনের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ছাড়া কেউ নোটিশের জবাব দেননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।
রিট পরিচালনাকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মোহনপুর সেতুর ইজারা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব, প্রধান প্রকৌশলী, রংপুর জোনের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী, দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী, ইজারাদানকারী প্রতিষ্ঠান মা ট্রেডার্সসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।