প্রতীক পেয়েই প্রচারে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী

একাদশ সংসদ নির্বাচন
একাদশ সংসদ নির্বাচন

দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় যেখানে প্রার্থীরা তৎপর ছিলেন, তাঁরা তখন থেকেই কোনো দলের নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থিতা ঘোষণা করে মাঠে ছিলেন তৎপর। স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর সমর্থনকারীর নামে অসংগতি থাকায় বাছাইয়ে বাদ পড়েন তাঁরা। অসংগতি দূর করে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে ফিরেছেন সংসদ নির্বাচনে। গত শুক্রবার রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর গতকাল শনিবার থেকেই প্রচারে নেমেছেন তাঁরা।
এই তিনজন হচ্ছেন এনামুল হক সরদার, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া ও মুহিবুর রহমান। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ দলীয় মনোনয়নের প্রার্থীদের মধ্যে তাঁরা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রচারে সক্রিয় থাকায় ২ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় ‘স্বতন্ত্রেই অবিচল তাঁরা তিনজন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।
জাহাঙ্গীর সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনের প্রার্থী। তাঁর প্রতীক মোটরগাড়ি। এনামুল ও মুহিবুর সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনের প্রার্থী। এনামুলের প্রতীক সিংহ। মুহিবুরের প্রতীক ডাব। গতকাল তিনজনই নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে নেমেছেন।
সিলেট-৬ আসনের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গতকাল প্রতীকসহ গণসংযোগ করেছেন জাহাঙ্গীর। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী। বিকল্পধারা থেকে প্রার্থী হয়েছেন সমশের মবিন চৌধুরী। গতকাল প্রতীক হাতে পেয়ে প্রথম দিনের গণসংযোগ শেষে জাহাঙ্গীর বলেন, নবীন হিসেবে তিনি ভোটারদের নজর কাড়ছেন।
এনামুল হক সর্দার শুক্রবার রাতে তাজপুর বাজারে প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করে গতকাল দিনভর তাজপুর থেকে বিশ্বনাথ বাজার পর্যন্ত গণসংযোগ করেছেন। তিনি জানান, প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, এখন প্রতীক নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। দলীয় প্রার্থীর ভিড়ে সাড়াও পাচ্ছেন।
সিলেটের একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে পরিচিত এনাম সরদার। সিলেট নগরে শাহজালাল সিটি কলেজ, শাহজালাল সিটি কারিগরি কলেজ ও পাইওনিয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান তিনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষক পরিচয়ের বাইরে এনাম সরদার বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র সিলেটে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী পাত্র সম্প্রদায়ের ওপর পিএইচডি করেছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুবাদে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচিতি রয়েছে। এনামুল হক সরদার জানালেন, সেই পরিচিতি ও ‘স্বতন্ত্র’ ভাবমূর্তি নিয়ে তিনি প্রার্থী হলেন।
জাহাঙ্গীর-এনামুল নির্বাচনে নতুন মুখ হলেও সিলেট-২ আসনের মুহিবুর রহমান নির্বাচনে পুরোনো মুখ। ১৯৮৫ সালে বিশ্বনাথে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের পর তিনি জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগের যোগদান করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থিতার দ্বন্দ্বে দল থেকে বহিষ্কৃত হলে যুক্তরাজ্যে চলে যান। ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এ দফায় হেরে যাওয়ায় আবার যুক্তরাজ্যে চলে যান।
এবার মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে দেশে ফিরে আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মুহিবুর বলেন, প্রার্থী হিসেবে তিনি পুরোনো ও নির্বাচন করার অভিজ্ঞতায় ভোটারদের কাছে বিশেষ কদর পাচ্ছেন।
সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আছেন জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী। তিনি বর্তমান সাংসদ। বিএনপি থেকে প্রার্থী এ আসনের সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর। এ ছাড়া, এ আসনে খেলাফত মজলিসের মুনতাসির আলী ও গণফোরামের মোকাব্বির খানও প্রার্থী।
সংশোধনী: স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে গতকাল প্রকাশিত ‘মোটরগাড়ি প্রতীক পেলেন জাহাঙ্গীর হোসেন’ শীর্ষক প্রতিবেদনের সঙ্গে ছবির ক্যাপশনে তাঁর নামের স্থলে অন্য একজনের নাম ছাপা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।