আর দেনা নেই শাহাবের, নাসিরের ঋণ ২০ কোটি

শাহাব উদ্দিন, নাসির উদ্দিন আহমেদ
শাহাব উদ্দিন, নাসির উদ্দিন আহমেদ

মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা) আসনের চার প্রার্থীর মধ্যে দুজন সম্পদে এগিয়ে। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শাহাব উদ্দিন এবং বিএনপির প্রার্থী নাসির উদ্দিন আহমেদ। বর্তমান সাংসদ শাহাব উদ্দিনের নগদ ও ব্যাংকে জমা টাকা আগের চেয়ে বেড়েছে। জমি ও গাড়ি কেনা বাবদ আগে প্রবাসী ভাইদের কাছে মোটা অঙ্কের তাঁর দেনা ছিল। এবার আর তা নেই। আর নাসিরের চা-বাগানসহ একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে ব্যাংকে দেনা আছে ঋণ ২০ কোটির বেশি। হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
শাহাব উদ্দিন ২০১৪ সালের হলফনামায় তাঁর পেশা ‘কৃষি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। কৃষি খাত থেকে বছরে আয় হতো ৩৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া সাংসদ হিসেবে বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক ভাতা থেকে পেতেন প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। তখন হাতে নগদ টাকা ছিল মাত্র ২৫ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা ছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৪ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ১ লাখ টাকা মূল্যের সাড়ে ১২ শতক কৃষিজমি ও ৩৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি (পরিমাণ উল্লেখ করা ছিল না) ছিল। বাড়ি ছিল পৈতৃক। দায় হিসেবে ঢাকার উত্তরা প্লটে ৫ কাঠা জমি ও জিপগাড়ি কেনা বাবদ প্রবাসী ভাইদের কাছ থেকে ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৪০০ টাকা নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
এবারের হলফনামায় সাংসদের পেশা ‘ব্যবসা’ লেখা থাকলেও তা এখন ‘নাই’ উল্লেখ করেছেন। তবে কৃষি খাত থেকে আগের চেয়ে আয় বেড়ে ৫০ হাজার টাকা হয়েছে। নিজের কাছে নগদ বেড়ে ২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকে জমা আছে ২২ লাখ ৭১ হাজার ৯০০ টাকা। আগে স্ত্রীর নামে ব্যাংকে টাকা জমা ছিল না। এবার জমা আছে ৯৯ হাজার ৬০০ টাকা। এবার ‘টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার’ মডেলের ৭৪ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপগাড়ি আছে। এবার কোনো দেনা বা ঋণ নেই তাঁর।
বিএনপির নাসির উদ্দিন আহমেদ এবার প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। পেশার বিবরণে তিনি ‘চা-বাগান, চা-প্রস্তুতকারী, ডেভেলপার, সিকিউরিটি সার্ভিস ও আমদানি-রপ্তানি’ লিখেছেন। কৃষি খাত থেকে বছরে তিনি ৭৫ হাজার টাকা আয় করেন। এ ছাড়া বাড়ি ও দোকানভাড়া, ব্যবসা এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পারিতোষিক থেকে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় হয়। তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮২০ টাকা। তাঁর নগদ ৩৪ লাখ ২০ হাজার ১৮৫ টাকা, ব্যাংকে জমা ১০ লাখ টাকা ও ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোম্পানির শেয়ার রয়েছে। নাসিরের স্ত্রীর নামে নগদ ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৫৫ হাজার ৮৪০ টাকা ও ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার কোম্পানির শেয়ার আছে। নাসিরের ৩১ লাখ ৬৭ হাজার ৯২০ টাকা মূল্যের একটি ‘মিতসুবিশি’ পাজেরো জিপ ও একটি ‘টয়োটা’ জিপ আছে। পাশাপাশি স্ত্রীর আছে ২১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪ টাকা মূল্যের ‘মিতসুয়াকা’ কার।
নাসিরের স্থাবর সম্পদ হিসেবে ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ৭২০ শতক জমি ও ৯০ লাখ টাকা মূল্যের ১৮০ শতক অকৃষি জমি আছে। স্ত্রীর নামে ১০ লাখ টাকা মূল্যের ১২৫ শতক অকৃষি জমি আছে। ঢাকা ও জুড়ীতে নাসিরের যৌথ অংশীদারির ১ কোটি ৭৭ লাখ ৩০ হাজার ২৫৭ টাকা মূল্যের দুটি দালান রয়েছে। নিজের নামে ঢাকায় ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের অ্যাপার্টমেন্ট আছে। তাঁর যৌথ অংশীদারির ১ কোটি টাকার চা-বাগানও রয়েছে। তিনটি ব্যাংকে নাসিরের সিসি, ব্যবসা ও গাড়ি ঋণ হিসেবে সাড়ে ৪ কোটির বেশি টাকার দায় রয়েছে। দুটি ব্যাংকে দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ আছে ১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার। তবে কোনো খেলাপি ঋণ নেই তাঁর।
নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যবসা করতে টাকা লাগে। আবার টাকা থাকলেও ঋণের প্রয়োজন। চা-বাগান ও ট্রেডিং ব্যবসার ক্ষেত্রে এই ঋণ নেওয়া হয়েছে।’