এককাট্টা হয়ে নির্বাচনের মাঠে বিএনপি-জামায়াত

একাদশ সংসদ নির্বাচন
একাদশ সংসদ নির্বাচন

পাবনার পাঁচটি আসনে জামায়াতের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে প্রতীক বরাদ্দের পাঁচ দিনেও ভোটের মাঠ জমাতে পারছিলেন না বিএনপির প্রার্থীরা। গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিএনপি-জামায়াত এককাট্টা হয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। গত শুক্রবার দুপুরে দুই দলের ঊর্ধ্বতন নেতারা বৈঠক করে এক হওয়ার এ সিদ্ধান্ত নেন।
তবে প্রতীক পেয়েই ভোটের মাঠে ব্যাপক সক্রিয় আওয়ামী লীগ। পোস্টার সাঁটানো থেকে শুরু করে মাইকিং, উঠান বৈঠক এবং সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মকাণ্ডে পুরো জেলা গরম রেখেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটের কারণে পাবনা-১ (বেড়া-সাঁথিয়া) ও পাবনা-৫ আসনে (সদর) দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি কোনো প্রার্থী দিতে পারছিল না। জামায়াতের দুজন শীর্ষ নেতা আসন দুটি দখল করে রেখেছিলেন। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধে ওই দুই নেতার সাজা হওয়ায় বিএনপি আসন দুটি ফিরে পাওয়ার আশা করেছিল। কিন্তু জামায়াত কিছুতেই আসন দুটি ছাড়তে চাচ্ছিল না। একপর্যায়ে বিএনপি পাবনা-১ আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে পাবনা-৫ আসনটি রক্ষা করার চেষ্টা করছিল। এই আসনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রার্থী হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে চাচ্ছিলেন। এতে জামায়াতও কিছুটা নমনীয় হয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাগড়া দিলেন আওয়ামী লীগ থেকে গণফোরামে যোগ দেওয়া অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। তিনি গণফোরামের হয়ে পাবনা-১ আসনে ধানের শীষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আসনটি হাতছাড়া হয় জামায়াতের। ফলে পাবনা-৫ আসনটি কামড়ে ধরলেন জামায়াতের নেতারা। শক্ত কামড়ে আবারও হারতে হলো বিএনপিকে। জোট রক্ষায় আসনটিতে ধানের শীষ পেলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইকবাল হোসাইন। ফলে আশাহত হয়ে পড়েছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা দুটি আসনেই হাত গুটিয়ে বসেছিলেন।
অপরদিকে পাবনা-৫ আসনে বিএনপি মাঠে না নামায় জেলার অন্য আসনগুলোতে হাত গুটিয়েছিল জামায়াত। জোট থাকলেও জমছিল না নির্বাচন। প্রচার-প্রচারণা থেকে পিছিয়ে পড়ছিলেন ধানের শীষের প্রার্থীরা।
জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিটি নেতা-কর্মী উদ্বিগ্ন ছিলেন। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার দুপুরে জেলা জামায়াতের আমন্ত্রণে বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতারা শহরের দারুল আমান ট্রাস্টের জামায়াত কার্যালয়ে বৈঠক করেন। জেলা জামায়াতের সভাপতি আবু তালেব মণ্ডলের সভাপতিত্বে বৈঠকে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুস সামাদ খান, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান এবং জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও পাবনা-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ইকবাল হোসাইনসহ দুই দলের ঊর্ধ্বতন নেতারা বক্তব্য দেন। আলোচনায় জেলার পাঁচটি আসনে দুই দল একাত্ম হয়ে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে জামায়াত-বিএনপি, ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরসহ দলের প্রতিটি স্তরের নেতাদের নিয়ে যৌথভাবে কমিটি হবে। ভোটের দিন পর্যন্ত কমিটি যৌথভাবে নির্বাচনী সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। এতে ঐক্যফ্রন্টের অন্য নেতারাও সংযুক্ত থাকবেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ধানের শীষ বিএনপির প্রতীক। তাই আমরা আর প্রার্থী দেখছি না। এখন প্রতীক দেখছি। পাবনার-৫টি আসনে ভোটাররাও প্রতীক দেখেই ভোট দেবেন বলে আশা করছি।’
অপরদিকে প্রতীক পেয়ে ভোটের মাঠে ব্যাপক সক্রিয় হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় কোন্দল, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে সবাই নৌকার পক্ষে কাজ শুরু করেছেন। জেলার পাঁচটি আসনেই নৌকার পোস্টারে এলাকা ছেয়ে গেছে। মাইকিং, বৈঠক, ভোট প্রার্থনা সবকিছুতেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠ গরম করে রেখেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রেজাউল রহিম বলেন, ‘আমরা ভোটে বিশ্বাসী। মানুষের মন জয় করে তাঁদের ভোট নিয়েই সংসদ নির্বাচনে জিততে চাই। সে লক্ষ্যেই জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে একাধিক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সবার দায়িত্ব ভাগ করা আছে। তাঁরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে আমাদের ১০ বছরের উন্নয়ন তুলে ধরতে। ফলে ভোটাররাও খুব খুশি। তাই নির্বাচনের মাঠ আমাদের পক্ষেই রয়েছে।’