এজলাসের বাইরে কাঁদছে স্বজন

দেড় মাসের ব্যবধানে দুই ছেলেই কারাগারে। অন্য ছেলেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আদালত চত্বরে কাঁদছেন মা সাহেরা খাতুন। গতকাল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে।  ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
দেড় মাসের ব্যবধানে দুই ছেলেই কারাগারে। অন্য ছেলেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আদালত চত্বরে কাঁদছেন মা সাহেরা খাতুন। গতকাল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

পাঁচ ফুট বাই চার ফুট জানালার ফাঁক দিয়ে বাবাকে একঝলক দেখতে চায় সাত বছরের মুমতাহিনা। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরও জনা ছয়েক মানুষ। সবাই এসেছে আদালতের কাঠগড়ায় থাকা স্বজনকে দেখতে। তাদের অবস্থান ছিল আদালতের বারান্দায় এজলাস কক্ষের বাইরে।

বয়সে সবার ছোট হলেও মুমতাহিনাকে কেউ একচুলও জায়গা ছাড়তে রাজি নয়। মেয়ের এই অবস্থা দেখে একটু দূরে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছিলেন মা রোকেয়া বেগম। তাঁর কোলে ১১ মাসের ছেলে।

গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকারমুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের চিত্র ছিল এমন। ঢাকার বিভিন্ন থানার পুলিশ শুক্রবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা ৯ ব্যক্তিকে হাজির করেছিল আদালতে। তাঁদের অনেকে বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে আসামিদের স্বজনদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকে কাউকে কাউকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুমতাহিনার বাবা ইব্রাহীম মনির এমন ঘটনার শিকার বলে দাবি তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগমের।

স্বজনেরা জানান, ইব্রাহীম মনির রাজধানীর খিলক্ষেতের হাজি মালেক মাতব্বর কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক। শুক্রবার রাতে মেয়েকে পাশে বসিয়ে পরীক্ষার খাতা কাটছিলেন তিনি। হঠাৎ রাত আটটার দিকে দরজায় কড়া নাড়ে পুলিশ। মুমতাহিনার সামনে থেকেই তারা ইব্রাহীমকে তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে তাঁর মেয়ের কান্না থামছে না।

রোকেয়া বেগম জানান, মেয়ে খালি জিজ্ঞেস করে, পুলিশ তো বলেছিল বাবাকে থানায় নিয়ে যাবে, আবার ফিরিয়ে দেবে। তাহলে এখানে কেন, বাসায় কখন যাবে? এগারো মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে তাই আদালতে আসতে হয়েছে তাঁকে।

হাতকড়া পরিয়ে পুলিশযখন আদালত থেকে ইব্রাহীমকে নিয়ে যাচ্ছিল, পেছন থেকে মুমতাহিনা ‘থামেন’, ‘থামেন’ বলে চিৎকার করছিল শুধু। ইব্রাহীম মনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী, জানতে চাইলে তাঁরআইনজীবীবলেন, ‘শিক্ষক মানুষ, বিস্ফোরক মামলায় সন্দেহভাজন আসামি বলে চালান দিল। বোমাটা ফুটল কবে, তা-ও জানে না। আবার হার্টের অসুখও আছে।’

শুধু সাত বছরের এই শিশু নয়, এক বৃদ্ধা বসে ছিলেন এজলাসের বাইরের মেঝেতে। ছেলেকে দেখেই খাবার নিয়ে ছুটতে দেখা যায় তাঁকে। আদালতের বারান্দায় মাকে চিন্তা করতে নিষেধ করেন ছেলে। বৃদ্ধ সায়েরা খাতুন অবশ্য ছেলে স্বপন ব্যাপারীর অনুরোধেও কান্না থামাতে পারেননি। তিনি কাঁদছিলেন চিৎকার করে। কী অপরাধে স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, জানতে চাইলে তাঁর স্ত্রী রিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, রাতে পুলিশ যখন তাঁদের আগামসিহ লেনের বাসায় আসে, তখনই তিনি অভিযোগ জানতে চেয়েছিলেন। দারোগারা শনিবার আদালতে খোঁজ নিতে বলেছেন। পরে রিনার জা সেলিনা আক্তার পারভিন বলেন, তাঁর স্বামী বিএনপি করেন। দেড় মাস আগে প্রথমে তাঁকে গ্রেপ্তার করে হামলা, গাড়ি ভাঙচুরের অপরাধে। এক ভাই বিএনপি করে বলে অন্যজনকেও (স্বপন) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বপনরা ছয় ভাই। বাকি চার ভাই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সবাই ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন সব বন্ধ।