খাগড়াছড়িতে আদিবাসী-বাঙালি সংঘর্ষ

খাগড়াছড়ি সদরের কমলছড়ি ইউনিয়নের ভূয়াছড়ি এলাকায় গতকাল বুধবার আবারও আদিবাসী ও বাঙালিদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা-সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন সাতজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কমলছড়ি ইউনিয়ন ও মহালছড়ি উপজেলায় গতকাল থেকে আগামীকাল শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
গত মঙ্গলবার কমলছড়ি ইউনিয়নের কমলছড়ি গ্রামের আদিবাসী ও ভূয়াছড়ি গুচ্ছগ্রামের বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে ছয়জন আহত হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি কমলছড়ি গ্রামের চর এলাকায় সবিতা চাকমা (৩০) নামের একজন আদিবাসী গৃহবধূর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই গত দুদিনে এসব সংঘর্ষ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গতকালের সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিরা হলেন কমলছড়ি ইউনিয়নের বেতছড়িমুখ গ্রামের রমাদেবী চাকমা, তাঁর ছেলে বিপ্লব জ্যোতি চাকমা, রেজাউল করিম, রিপন তরফদার, জাহেদুল, মো. শাহজাহান ও শহীদ বিশ্বাস। আহত ব্যক্তিদের প্রথম দুজন দায়ের কোপে ও বাকি পাঁচজন অন্য দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিপ্লব জ্যোতি চাকমার স্ত্রী সমরানী চাকমা অভিযোগ করেন, ‘ভূয়াছড়ি গুচ্ছগ্রামের বাঙালিরা বেলা ১১টার দিকে বাড়ির কাছে আমার স্বামী ও শাশুড়িকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। তাঁরা একটি নলকূপে গোসল করতে গিয়েছিলেন। হামলার পর বাড়ি থেকে আমরা কোনোরকমে পালিয়ে যেতে সক্ষম হই। এরপর বাঙালিরা আমাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।’
অন্যদিকে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভূয়াছড়ি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম অভিযোগ করেন, ‘গত মঙ্গলবার আমাদের গ্রামের এক ছেলে নিখোঁজ হয়। তাকে খুঁজতে গতকাল সকাল আটটার দিকে আমরা কয়েকজন গ্রামের অদূরে বেতছড়ি মুখ গ্রামে গেলে আদিবাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পাঁচজন আহত হন।’
কমলছড়ি ইউনিয়নের আপার বেতছড়ি গ্রামের পশ্চিমপাড়া চৈত্য আদর্শ বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষু শ্রীমৎ প্রজ্ঞাদ্বীপ অভিযোগ করেন, গতকাল সকাল নয়টার দিকে শতাধিক বাঙালি ভূয়াছড়ি গুচ্ছগ্রাম থেকে এসে এই বিহারে হামলা চালায়। এ সময় তারা বিহারের জিনিসপত্র তছনছ ও চারটি বৌদ্ধমূর্তি লুট করে নিয়ে যায়।
পাল্টাপাল্টি এসব হামলার ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি ও সেনা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এর আগে মঙ্গলবার সংঘর্ষের পর জেলা প্রশাসন সেদিন সন্ধ্যায় সার্কিট হাউসে স্থানীয় সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলার পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও কমলছড়ির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবিষয়ক বৈঠক করেন। বৈঠকের পরদিনই আবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল।
এ অবস্থায় জেলা প্রশাসন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়ন ও মহালছড়ি উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোছাম্মৎ আনার কলি জানান, বুধবার বিকেল চারটা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ মামলা করেনি। রাতের বেলা ভূয়াছড়ি এলাকায় পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যদের টহল থাকবে।