খেলা থেকে পালাবেন না, ঐক্যফ্রন্টকে নাসিম

মোহাম্মদ নাসিম। ফাইল ছবি
মোহাম্মদ নাসিম। ফাইল ছবি

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘খেলা শুরু হয়ে গেছে৷ সেমিফাইনালে আমরা জয়লাভ করেছি, ফাইনাল খেলা হবে ৩০ ডিসেম্বর। বিএনপি ও তথাকথিত ঐক্যফ্রন্ট, আপনারা এই খেলা থেকে পালিয়ে যাবেন না৷’

‘আমার ভোট আমি দেব, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেব’ স্লোগানে ১৪ দলের আহ্বানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যৌথভাবে ‘বিজয় মঞ্চ’ গঠন করেছে। আজ রোববার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মঞ্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ নাসিম এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পাঁচ বছর ধরে বলে আসছি, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে৷ বিএনপি-জামায়াত বলেছিল সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করবে না৷ কিন্তু শেখ হাসিনার অধীনে তাদের নাকে খত দিয়ে নির্বাচন করতে হচ্ছে৷’

ঐক্যফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে নাসিম বলেন, ‘আমার লজ্জা ও ঘৃণা হয় যে ড. কামাল হোসেন সাহেব বঙ্গবন্ধুর স্নেহ পেয়েছিলেন, মন্ত্রী হয়েছিলেন৷ সেই কামাল হোসেন আজকে রাজাকারের পক্ষে সাফাই গায়৷ যে কাদের সিদ্দিকী মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, সে আজকে রাজাকারের ধানের শীষ নিয়ে মাঠে নেমেছে৷ বলতে লজ্জা হয়, এই সমস্ত ব্যক্তিরা আজকে নতুন মিরজাফর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, মিরজাফরের জন্ম হয়েছে নতুন করে৷’

১৪ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে অবস্থান জানতে চাওয়ায় সাংবাদিকদের ওপর ড. কামাল হোসেনের ক্ষুব্ধ হওয়া সম্পর্কে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘গুণী মানুষ কামাল হোসেন কী করে সাংবাদিকদের ধমক দেন৷ সাংবাদিকেরা যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন, যেকোনো অবস্থায় জবাব চাওয়ার অধিকার তাঁদের আছে৷ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে দাঁড়িয়ে কেন আপনি উর্দু ভাষায় সাংবাদিকদের ধমক দিলেন৷ ৩০ ডিসেম্বর নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলার জনগণ এর জবাব ইনশা আল্লাহ দিয়ে দেবে৷ হামলা-মামলা করে নয়, ভোটের মাধ্যমে জবাব দেওয়া হবে৷

জনগণের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিম বলেন, ‘পাঁচ বছরে দেশ পরিচালনায় আমাদের ভুল হয়ে থাকতে পারে৷ মানুষ ভুল করে, ভুল করে না ফেরেশতা আর শয়তান৷ আমাদের ভুলের জন্য কোনো বড় ভুল করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হাতে দয়া করে বাংলাদেশকে তুলে দেবেন না৷ আমরা কারও ওপর হামলা করতে চাই না, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিশ্বাস করি। কিন্তু ওরা গায়ে পড়ে হামলা করছে৷’

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘শেখ হাসিনা একজন অভিজ্ঞ ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ৷ তাঁকে প্রতিহত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে বিএনপি-জামায়াত এবং ২০-দলীয় জোট৷ যখন তারা রণেভঙ্গ দিল, মাঠে এসে দাঁড়ালেন ড. কামাল হোসেন৷ তিনি একজন বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ মানুষ এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন৷ তিনি কখন কী বলেন না-বলেন, আমরা জানি না৷ সাংবাদিকদেরও ধমক দিয়ে বলেছেন, খামোশ৷ তার মানে উনি রাজাকারদের পক্ষ নিয়েছেন৷ এই হলো আজকে বিরোধী দলের রাজনীতি৷’

বিজয় মঞ্চের আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘জাতির দুর্ভাগ্য যে ৪৭ বছর পরে এসেও একাত্তরের পরাজিত শক্তির সঙ্গেই লড়াই করতে হচ্ছে৷ মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি আবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে৷ কিছু মুক্তিযোদ্ধাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন৷ মুক্তিযুদ্ধ একটি আদর্শ ও চেতনার নাম৷ একজন মুক্তিযোদ্ধা যদি আজকে সেই আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাস না করেন, তিনি আর মুক্তিযোদ্ধা নন, তিনি কেবল একজন অস্ত্রধারী৷ এই বিজয় মঞ্চ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের আহ্বানে গঠিত৷ ১৪ দল আমাদেরকে মঞ্চ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে৷ প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে আমাদের এই আদর্শিক অনুষ্ঠান চলবে।’

সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ খান বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে দেড় কোটি তরুণ ভোটার আছেন৷ তাঁদের জন্য আমাদের স্লোগান-তারুণ্যের প্রথম ভোট, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক৷ তাঁদের কথা মাথায় রেখেই বিজয় মঞ্চের কর্মসূচি৷ ১৪ দলকে সাহায্য করার জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আনার জন্য আমরা দেশের সব জেলা-উপজেলায় কাজ করব৷ ১৯৭০-র নির্বাচনের মতো জনগণ জেগে উঠবে৷’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা কামাল পাশা চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন৷

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত বিজয় মঞ্চ ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে৷ প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে আলোচনা ও এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে৷ প্রয়োজনে মঞ্চের কার্যক্রমের সময়সীমা ৩০ বা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ৷