২২ বছর পর ধানের শীষ

>

এবার ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ।

পাবনা-১ আসনে (সাঁথিয়া ও বেড়ার আংশিক) ২২ বছর পর আবার ধানের শীষ প্রতীক ফিরে এসেছে। তবে প্রতীক পেলেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা এবারও নিজেদের দলের প্রার্থী পাননি। এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগেরই সাবেক সাংসদ ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে গণফোরামে যোগ দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে নির্বাচনী লড়াই হচ্ছে বর্তমান সাংসদ ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর।

সর্বশেষ ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) মনজুর কাদের। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে আবু সাইয়িদই বিজয়ী হয়েছিলেন। বিজয়ী হয়ে তিনি তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। অথচ এবার সেই আবু সাইয়িদ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নৌকার বিপক্ষে।

পাবনা-১ আসনটি নানা কারণেই আলোচিত একটি আসন। এই আসনে জামায়াতের ব্যাপক প্রভাব থাকায় এবং জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী ১৯৯১ ও ২০০১ সালে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ায় এটি ‘নিজামীর আসন’ বলে পরিচিতি পায়। এ ছাড়া এ আসন থেকে নির্বাচিত বেশির ভাগ সাংসদই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবনা-১ আসনে বিএনপির অবস্থানও বেশ শক্ত। এ আসনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন মনজুর কাদের। ১৯৯৬ সালে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও জোটের প্রয়োজনে ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনটি জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ওই দুটি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। আর ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জনই করে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর স্থানীয় বিএনপি থেকে দাবি ওঠে এবার যেন এ আসন থেকে বিএনপিরই কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশীকে দেখা গেলেও মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তাঁদের প্রতি আস্থা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এই অবস্থায় আবু সাইয়িদ ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বড় অংশই তাঁকে বরণ করে নিয়েছেন। এই অংশের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, আবু সাইয়িদ একজন অভিজ্ঞ ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ। এ ছাড়া তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও সংবিধান রচয়িতাদের একজন।

এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রইজউদ্দিন বলেন, ‘এবারের নির্বাচন অন্য রকম একটি নির্বাচন। এখানে প্রার্থী বড় নয়, প্রতীকই বড়। পাবনা-১ আসনে দীর্ঘদিন পর ধানের শীষ প্রতীক ফিরে আসায় নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। এর ওপর আবু সাইয়িদের মতো বিজ্ঞ নেতার ব্যাপারে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ।’

তবে বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে পাবনা-১ আসনটি দলের হাতছাড়া। এবার বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন পেলে নেতা-কর্মীরা আরও বেশি উৎসাহ পেতেন। এসব নেতা-কর্মীর মতে, এ আসনে ধানের শীষ প্রতীক যদি জয়ী হয়, তবে সেই প্রার্থী তো অন্য দলের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির দুজন কর্মী আক্ষেপ করে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা অন্য দলের হয়ে ভাড়াই খেটে গেলাম। তবে এবার ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ায় কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাচ্ছি।’

আবু সাইয়িদ বলেন, ‘দেশ ও মানুষের প্রয়োজনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছি। শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরাই নয়, সাধারণ মানুষও আমার সঙ্গে আছে। প্রতিটি ভোটারের কাছ থেকেই ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’