দেয়ালে দেয়ালে ভোটের প্রচারণা

>

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী দেয়ালে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে দেয়ালে লিখে নৌকায় ভোট চাওয়া হয়েছে।  ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী দেয়ালে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে দেয়ালে লিখে নৌকায় ভোট চাওয়া হয়েছে। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রোকেয়া হলের দেয়াল থেকে উপাচার্য ভবনের দেয়াল পর্যন্ত নৌকার পক্ষে প্রচারণা।

দেয়ালে নৌকার চিত্র, পাশে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে বার্তা। কোথাও বর্তমান সরকারের উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে পুনরায় ভোট দেওয়ার আহ্বান। দেয়ালের কোনো অংশে আবার তরুণ ভোটারদের নৌকায় ভোট দেওয়ার বার্তাসংবলিত স্লোগান।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের দেয়াল থেকে উপাচার্য ভবনের দেয়াল পর্যন্ত নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চেয়ে দেয়াললিখন এবং চিত্র আঁকা হয়েছে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে। লাল-নীল-হলুদ-সবুজ-কালো-সাদা রং দিয়ে ছবি এঁকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ধরনের কয়েকটি দেয়াললিখনের বার্তা হলো, ‘৩০ তারিখ সারা দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’, ‘সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে নৌকায় ভোট দিন’, ‘কর্মমুখী শিক্ষা নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’, ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়েছে। কিন্তু এর আগে থেকেই দেয়াললিখনের মাধ্যমে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে ছাত্রলীগ। এতে নির্বাচনের আচরণবিধি যেমন লঙ্ঘন হচ্ছে, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যহানি হচ্ছে।

নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮-এর বিধি ৯(ক) ও খ অনুযায়ী, দেয়ালে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। কোনো কালি বা রং দ্বারা বা অন্য কোনোভাবে দেয়াল ছাড়াও কোনো দালানে নির্বাচনী প্রচারণামূলক কোনো লেখা বা আঁকা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঢাকা-৮ আসনের অন্তর্ভুক্ত। এটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়াললিখন নিয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রমনা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেয়াললিখন নিষিদ্ধ। এটি আচরণবিধি লঙ্ঘন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নির্বাচনী বক্তব্য দিয়ে আঁকা দেয়াললিখন এখনো তাঁর চোখে পড়েনি। নির্বাচনী প্রচারণাসংবলিত দেয়াললিখন থাকলে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদ শাহজালাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিটি করপোরেশনকে বলা হয়েছে। তবে গতকাল রোববারও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেয়াললিখন আগের মতোই আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে এমন প্রচারণা নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতে অনিয়মের বিরুদ্ধে দেয়াললিখন হয়। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অধিকার নিয়ে বার্তা থাকে। অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে গ্রাফিতি থাকে। কিন্তু এবার দেয়ালজুড়ে একটি দলের ভোটের প্রচারণা করা হচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়াললিখনের রীতি অনেক আগে থেকে চলে আসছে। তবে এটি নির্বাচনসংক্রান্ত হলে এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন করে থাকলে তা দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে আঁকার জন্য কেউ অনুমতি নেয়নি। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চাইলে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা চাইলে তা করা হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, দেয়াললিখনটি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর তত্ত্বাবধানে করা হয়েছে।

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে দেয়াললিখনের বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এটি দেয়াললিখন নয়, গ্রাফিতি। এটি করেছে চারুকলার ছাত্রলীগের কর্মীরা। তবে এটি ভোট চেয়ে বা নির্বাচনের প্রচারের জন্য নয়, করা হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে।’ ভোট চেয়ে দেয়াললিখন নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন, বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘এর কোনোটিতে যদি আচরণবিধির লঙ্ঘন হয়, তবে সে অংশটুকু মুছে দিতে চারুকলার ছাত্রলীগকে বলব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নির্বাচনী দেয়াললিখনের কেবল আরচণবিধি লঙ্ঘনই নয়, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ধারণারও পরিপন্থী। এ মাসের শুরুতে যখন এ দেয়াললিখন হচ্ছিল, তখনই এ বিষয়ে আমরা প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীকে জানিয়েছি। তিনি সে সময় কোনো ব্যবস্থা নেননি। ক্যাম্পাসের ভেতর শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কোনো বক্তব্য দিয়ে দেয়াল লেখা যেতে পারে, ভোট চেয়ে কোনো দলের নির্বাচনী বক্তব্য থাকতে পারে না।’