আটকের আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

>
  • মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম জামাল উদ্দিন
  • জামাল যাত্রাবাড়ী এলাকায় থাকতেন
  • জামালের কেবল টিভির ব্যবসা আছে 
  • নির্যাতনে জামালের মৃত্যুর অভিযোগ
জামাল উদ্দিন
জামাল উদ্দিন

বাসার নিচ থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার আড়াই ঘণ্টার মধ্যে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলেছে, আটকের সময় ওই ব্যক্তি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে তিনি মারা যান। তবে পরিবারের দাবি, ওই ব্যক্তি সুস্থ ছিলেন। পুলিশি নির্যাতনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

ওই ব্যক্তির নাম জামাল উদ্দিন (৪৫)। যাত্রাবাড়ীর কাজলার শেখদিবাজার এলাকায় তাঁর কেবল টিভির ব্যবসা রয়েছে। সেখানে তিন সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।

গতকাল রোববার বিকেলে শেখদিবাজারে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশের পাহারায় জামালের জানাজার নামাজ হচ্ছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী একটি চেয়ারে বসে আছেন। নামাজ শেষে পুলিশ চলে যায়। একটু সামনে এগোতেই দেখা যায়, জামালের স্ত্রী মায়া চৌধুরী হাউমাউ করে কাঁদছেন। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মায়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গত শনিবার রাতে তাঁর স্বামী বাসায় ছিলেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাঁর এক বন্ধু ফোন দিলে তিনি বেরিয়ে যান। এরপর জানতে পারেন, তাঁকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

হাজি আবদুল গফুর নামের এক এলাকাবাসী বলেন, সাদাপোশাকের দুই ব্যক্তি প্রথমে জামালকে একটি রিকশায় করে নিয়ে যান। পরে মূল রাস্তায় রাখা একটি লেগুনায় তোলা হয়। তাঁরাও পেছন পেছন যান। স্থানীয় বাসিন্দা সুফিয়া বেগমের সঙ্গে জামালের বড় ছেলে শুভ থানায় গিয়েছিলেন। সুফিয়া বলেন, শুভ দুই লিটারের একটি পানির বোতল কিনে তাঁর বাবাকে দেন। তখন পুলিশ তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং সেখান থেকে চলে যেতে বলে।

আবদুল গফুর বলেন, একটু পর ফোন দিয়ে পুলিশ তাঁদের উত্তর যাত্রাবাড়ীর ইসলামিয়া হাসপাতালে যেতে বলে। সেখানে দেখেন, পুলিশ তাঁকে স্ট্রেচারে করে নামাচ্ছে। তাঁর কোনো চেতনা নেই।

জামালের স্ত্রী মায়া চৌধুরী বলেন, তাঁর স্বামী সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ কোনো কিছুই ছিল না। তাঁর দাবি, পুলিশি নির্যাতনে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে।

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, জামাল যাত্রাবাড়ী থানার পাঁচটি মামলার আসামি ছিলেন। পুলিশ তাঁকে আটক করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওসির দাবি, জামাল আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ১২টা ৫ মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে নিহত ব্যক্তির পরিবারের আপত্তির কারণে তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্তের জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আনা হয়।

মামলার বিষয়ে জামালের স্ত্রী ও স্বজনেরা বলেন, জামাল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। মাস দুয়েক আগে বিএনপির পাঁচটি ভাঙচুর মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়।

জামালের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা–৫ আসনের বিএনপির প্রার্থী নবিউল্লাহ। প্রথম আলোর কাছে তিনি দাবি করেন, জামাল যুবদলের কর্মী ছিলেন। এ কারণে তাঁকে গায়েবি মামলার আসামি করে পুলিশ।

জামালের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক প্রদীপ বিশ্বাস। গতকাল মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।