উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগের, সতর্ক বিএনপি

কক্সবাজার–১ আসনের চকরিয়ার খোজাখালীতে পথসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর আলম। গত শুক্রবার বিকেলে।  প্রথম আলো
কক্সবাজার–১ আসনের চকরিয়ার খোজাখালীতে পথসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর আলম। গত শুক্রবার বিকেলে। প্রথম আলো

কক্সবাজারের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের দিকেই বেশি মানুষের নজর। কারণ এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুজন প্রার্থী এখন মুখোমুখি। ইতিমধ্যে তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা, ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ তুলছেন। ভোটের তারিখ যত ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচনী উত্তাপও ছড়াচ্ছে তত দ্রুত।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর আলম উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী হাসিনা আহমেদ ভোটারদের সতর্ক করছেন। ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র পাহারার ডাক দিচ্ছেন।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের ২৯৪ আসন, কক্সবাজার-১। চকরিয়া উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং পেকুয়া উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নের হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮২৯ জন। এর মধ্যে চকরিয়ায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫০ এবং পেকুয়ায় ১ লাখ ৬ হাজার ২৭৯ জন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আটজন প্রার্থী। এর মধ্যে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন জাফর আলম ও হাসিনা আহমেদ।
ভোটাররা বলেন, পেকুয়া উপজেলার চেয়ে চকরিয়ার ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭১ বেশি। আঞ্চলিকতার প্রশ্নে এই ভোট নৌকায় উঠলে ধানের শীষ বিপাকে পড়বে।
গত শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয়া-পেকুয়ার বেশির ভাগ এলাকা নৌকা ও ধানের শীষের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। তবে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ও পেকুয়ার বারইয়াকাটা এলাকায় নৌকার কিছু পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। আবার চকরিয়ার কোরালখালী ও পেকুয়ার উজানটিয়াতে ধানের শীষের কিছু পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।
কোরালখালী এলাকার ভোটার সাইমুল হক (২৯) বলেন, ‘যিনি সুখে-দুঃখে সব সময় জনগণের পাশে থাকেন, তাকেই আমরা ভোট দেব।’
চকরিয়া পৌরসভার ভোটার ছাবের আহমদ বলেন, পৌরসভার যানজটে মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। যানজট নিরসনে যিনি প্রতিশ্রুতি দেবেন, তাঁকেই ভোট দেব।
পেকুয়ার কাছারিমোড়ার ভোটার মোহাম্মদ হোছাইন (৩০) বলেন, ‘গত পাঁচ বছর পেকুয়ায় তেমন উন্নয়ন হয়নি, উন্নয়নে যিনি অবদান রাখবেন, তাঁকেই আমরা ভোট দিব।’
তবে কয়েকজন নারী ভোটার বলেন, নির্বাচনের দিন দুই প্রার্থীর মধ্যে গোলযোগ লেগে গেলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে তাঁরা আতঙ্কিত।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে চারটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করলেও জিততে পারেনি। এ কারণে আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে। তবে এবার সেই দুর্গে আঘাত হানতে চায় দলটি। এবার জাফর আলমকে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে ৪৫ বছরের পরাজয়ের গ্লানি ঘোচাতে চান তাঁরা।

কক্সবাজার-১ আসনের পেকুয়ার বনকাননে পথসভায় বক্তব্য দেন বিএনপির প্রার্থী হাসিনা আহমেদ। গত শুক্রবার সকালে।  প্রথম আলো
কক্সবাজার-১ আসনের পেকুয়ার বনকাননে পথসভায় বক্তব্য দেন বিএনপির প্রার্থী হাসিনা আহমেদ। গত শুক্রবার সকালে। প্রথম আলো

জাফর আলম গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, কর্মী ও নারী সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরছেন। নৌকা প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, জাফর আলম ঝিমিয়ে পড়া নেতা-কর্মীদের জাগিয়ে তুলেছেন। বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
ভোটাররা বলছেন, প্রচারণায় জাফর আলম ভোটারদের কাছে নানা উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছেন। এর মধ্যে পেকুয়া ইউপিকে পৌরসভায় রূপান্তর, মাতামুহুরীকে উপজেলায় উন্নীতকরণ, যানজট নিরসনে চকরিয়া পৌরসভায় উড়ালসড়ক নির্মাণ ও মাতামুহুরী নদী খনন অন্যতম।
জাফর আলম বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তা ছাড়া চকরিয়া-পেকুয়ায় আওয়ামী লীগের ১০ বছরের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন তিনি।
অন্যদিকে হাসিনা আহমেদও চকরিয়া ও পেকুয়ার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন। তিনি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং তারেক জিয়া-সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ধানের শীষে ভোট দিতে বলছেন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে উন্নয়নের চিত্রের সঙ্গে ২০০৮-২০১৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন।
হাসিনা আহমেদের প্রচারণায় গুরুত্ব পাচ্ছে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। তাঁর দাবি, গত ১০ বছর ধরে চকরিয়া–পেকুয়ার গ্রামীণ রাস্তাঘাটের তেমন উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাটগুলো ইতিমধ্যে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
হাসিনা আহমেদ বলেন, তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। পুলিশ প্রতিরাতে নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। নির্বাচনী মৌসুমেও চকরিয়া ও পেকুয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নিলেও পুলিশ বাড়িতে গিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের না পেলে পরিবারের সদস্যদের হেনস্তা করছে।