আরও অন্তত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী

বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর। ছবি: পিআইডি
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর। ছবি: পিআইডি

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন নির্বাচনে তাঁর দলের পক্ষে ভোট চেয়ে বলেছেন, দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাকে যাতে কেউ ব্যাহত করতে না পারে, সে জন্যই আওয়ামী লীগের অন্তত আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার প্রয়োজন রয়েছে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরও পাঁচটি বছর সরকারে থাকা আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। তখন বাংলাদেশে হতদরিদ্র বলে কিছু থাকবে না। প্রতিটি মানুষের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা—যেটুকু বাকি আছে, সেটাও আমরা করতে সক্ষম হব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালি জাতির কাছে, বাংলাদেশের জনগণের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই এই কারণেই, যাতে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ যেন কেড়ে নিতে না পারে।’ তিনি বলেন, ‘আজকে দারিদ্র্যের হার বাংলাদেশে ২১ ভাগে নেমে এসেছে। ইনশা আল্লাহ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার যদি আগামী ৫ বছর আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারি, তাহলে এই দারিদ্র্যের হার আমরা অন্তত আরও ৫ থেকে ৬ ভাগ কমিয়ে আনতে সক্ষম হব।’

বঙ্গবন্ধু-কন্যা এ সময় ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী দারিদ্র্যমুক্ত দেশে সবাই মিলে উদযাপনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কারও নাম উচ্চারণ না করে তিনি বলেন, সত্য, আদর্শ ও নীতিবিবর্জিতরা দেশের জন্য কখনো মঙ্গল বয়ে আসতে পারে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি একটা কথাই বলব, নৌকা মার্কায় ভোট চাই, সেবা করে দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আছে, বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দেবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মানুষ বিজয় দিবসে মন খুলে বিজয় উল্লাস করতে পারছে। বিজয় দিবসটা তারা উদযাপন করতে পারছে। একটা সময় ছিল এটা উদযাপন করাই যেত না। ইতিহাস বলা যেত না, বিকৃত ইতিহাস বলা হতো, কিন্তু এখন আর সেই অবস্থাটা নেই। অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং এই ধারাবাহিকতাটাই বজায় থাকতে হবে, তাহলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আর কেউ বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে পারবে না।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। বাংলাদেশের জনগণ কখনো ভুল করে না। আর তাদের ভোটের সাংবিধানিক অধিকার আর কখনো কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সেই সাহসও পাবে না।’ শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কা জনগণের মার্কা। এই নৌকা মার্কা দিয়ে এ দেশে স্বাধীনতা এসেছে। এই নৌকা মার্কা দিয়েই আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি। এই নৌকা মার্কার ফলেই আজকে বাংলাদেশের এই উন্নয়ন। উন্নয়নের গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে আজকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই নৌকা মার্কা ছিল বলেই আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েশন হয়েছে। আজকে আমরা মহাকাশ জয় করেছি, স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করছি। পাশাপাশি বিশাল সমুদ্রসীমা যেমন অর্জন করেছি, আমাদের ল্যান্ড বাউন্ডারি অর্জন করেছি।’

ড. কামালের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা একটি প্রশ্নের উত্তর দিতেই সাংবাদিকদের হুমকি দেয় এবং খামোশ বলে ভয় দেখায়, তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে কী সুশাসন দিতে পারে, তা বুঝাই যায়।’

গত শুক্রবার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জামায়াতের বিষয়ে প্রশ্ন করায় ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে জানতে চান, ‘জামায়াতের তো রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, এখন জামায়াত সম্পর্কে আপনাদের সর্বশেষ অবস্থান কী?’ এ প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘কত টাকা পেয়েছ এই প্রশ্নগুলো করার জন্য? শহীদ মিনারে এসেছ, শহীদদের কথা চিন্তা করা উচিত। কোন চ্যানেল থেকে এসেছ? চিনে রাখব। চুপ করো, খামোশ!’

আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিজয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে ওই প্রশ্নকর্তা যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার ভাস্কর ভাদুরী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি ড. কামালের সমালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব আসিফ কবির বাসসকে জানান, ভাস্কর ভাদুরী নিজের জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানালে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘কোন হুমকি-ধমকি স্বাধীন, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হবে না। যারা একটি প্রশ্নের উত্তর দিতেই সাংবাদিকদের হুমকি দেয় এবং খামোশ বলে ভয় দেখায়, তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কী সুশাসন দিতে পারে তা বুঝাই যাচ্ছে।’ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত না হওয়ার জন্য ভাস্কর ভাদুরীকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ সভায় বক্তৃতা করেন।

দলের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নারীবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক সুজীত রায় নন্দী, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এবং দলের ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তরের নেতারা সভায় অংশগ্রহণ করেন।