আসন রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে ইমরান-দিলদার

ইমরান আহমদ, আ.লীগ; দিলদার হোসেন, বিএনপি
ইমরান আহমদ, আ.লীগ; দিলদার হোসেন, বিএনপি

২০০৮ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইমরান আহমদ ও বিএনপির দিলদার হোসেন সেলিমের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। ২০০৮ সালে ইমরান এবং ২০০১ দিলদার বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল। ওই নির্বাচনে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হারিয়ে ইমরান সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর ইমরান-দিলদার আবারও সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে ভোটের মাঠে মুখোমুখি হয়েছেন।
স্থানীয়দের ধারণা, এবারও এই দুজনের যেকোনো একজনই জয় পাবেন। তবে শেষ পর্যন্ত কে বিজয়ী হন, সেটা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ভোটের মাঠে ইমরান ও দিলদার উভয়েই ব্যাপক জনপ্রিয়। গত ১০ বছরে সাংসদ থাকায় ইমরান আহমদ নির্বাচনী এলাকার তিনটি উপজেলাতেই প্রচুর পরিমাণে উন্নয়নকাজ করেছেন। অপরদিকে এ সময়ের মধ্যে দিলদার স্থানীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এর ফলে উভয়েরই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৯৩১। সে নির্বাচনে দিলদার হোসেন ৬২ হাজার ৩২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান আহমদ পেয়েছিলেন ৪৭ হাজার ৬০৮ ভোট। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮২ জন। সে নির্বাচনে ইমরান আহমদ ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। সেবার দিলদার হোসেন পেয়েছিলেন ৯৮ হাজার ৫৪৫ ভোট। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ জন এবং নারী ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮০১ জন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, এ আসনের গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বড় দুটি পাথর কোয়ারি রয়েছে। এ দুটি কোয়ারিতে বিশেষত হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে থাকেন। তাঁদের অনেকেই আবার এখানের ভোটার। এর ফলে নির্বাচনে ওই জনগোষ্ঠীর ভোট জয়-পরাজয়ে একটা বড় ভূমিকা রাখে। তবে এ আসনটি এককভাবে কোনো দলেরই ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নয়। আওয়ামী লীগ ও
বিএনপির উভয় দলের প্রার্থীই নানা সময়ে এখানে জয়লাভ করে আসছেন। এবার কোন প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন, সেটা এখনো অনুমান করা সম্ভব হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও এ আসনে আরও তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হচ্ছেন জাতীয় পার্টির আহমেদ তাজ উদ্দিন তাজ রহমান (লাঙ্গল), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মনোজ কুমার সেন (কোদাল) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জিল্লুর রহমান (হাতপাখা)। দুই বড় দলের প্রার্থীদের পাশাপাশি তাঁরাও এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় ভোটাররা জানিয়েছেন, দুই বড় দলের প্রার্থী গণসংযোগের সময় নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী উন্নয়নের স্বার্থে নৌকাকে পুনরায় বিজয়ী করার আহ্বান জানাচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী স্থানীয় উন্নয়নের পাশাপাশি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত করতে ধানের শীষে ভোট চাইছেন।
ইমরান আহমদ বলেন, ‘আমার টানা দুই মেয়াদকালে এলাকায় প্রচুর পরিমাণে উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বরাবরই আন্তরিক। অসমাপ্ত উন্নয়নকাজগুলো সমাপ্ত করতে পুনরায় এলাকাবাসী আমাকে নির্বাচিত করবেন বলে মনে করি।’
দিলদার হোসেন সেলিম অভিযোগ করে বলেন, ‘গত রোববার রাতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আমার গাড়িতে হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের তাণ্ডবে সারা দেশে প্রার্থীরা ঠিকমতো প্রচার চালাতে পারছেন না। এর বাইরে নই আমিও। বিএনপির বিজয় নিশ্চিত দেখেই, তাঁরা এমনটি করছেন। তবে শত চেষ্টা করেও ফল ছিনিয়ে নেওয়া যাবে না। নির্বাচিত হলে আমি নির্বাচনী এলাকার সমস্যাগুলো পরিকল্পনামাফিক নিরসন করব।’