নারী ভোটারদের মূল্যায়ন নেই

যেকোনো নির্বাচনে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ভোটও ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। কিন্তু ঠাকুরগাঁও জেলার অনেক নারী ভোটারের অভিযোগ, প্রার্থীরা তাঁদের কাছে খুব একটা ভোট চাইছেন না। তবু তাঁরা যাঁকে ভালো মনে করবেন, তাঁকেই ভোট দেবেন বলে জানান।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও-১ (সদর উপজেলা) আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২১ হাজার ৬২২ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ১০ হাজার ৯৬ জন নারী ভোটার। ঠাকুরগাঁও-২ (বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার দুটি ইউনিয়ন) আসনে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৩৬ ভোটারের মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৩ জন। ঠাকুরগাঁও-৩ (রানীশংকৈল ও পীরগঞ্জ) আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ১১৮ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬৭ জন।
গত রোববার ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, ‘গত শুক্রবার এক প্রার্থীর সমর্থকেরা বাসায় ভোট চাইতে এসে আমাকেই বলছেন, বাসার অভিভাবক কে? আমিও একজন ভোটার। কিন্তু আমার কাছে ভোট চাওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না তাঁরা।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও গ্রামের বাসিন্দা রনজিনা বেগম বলেন, বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা পুরুষদের নিয়ে রাত-দিন সভা করে ভোট চান। কিন্তু তাঁরা নারীদের নিয়ে কোনো সভা করেন না।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রামের ভোটার নাজিয়া বেগম বললেন, এবারই তিনি প্রথম ভোট দেবেন। এখনো কেউ তাঁর কাছে ভোট চাননি। তবে তিনি কারও কথায় নয়, দলের পাশাপাশি এলাকার যিনি উন্নয়ন করবেন, তাঁকেই ভোট দেবেন।
সদর উপজেলার রহিমানপুর গ্রামের চাকরিজীবী শাহিনা বেগম বলেন, ‘ভোট দেওয়ার আগে আমরা আশপাশের নারীদের সঙ্গে প্রার্থীদের ভালো-মন্দ নিয়ে আলোচনা করি। তারপর যাঁকে ভালো লাগে, তাঁকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমি সব সময় নিজের পছন্দেই ভোট দিয়ে আসছি। এবার ভেবেছিলাম যাঁরা ভোট চাইতে আসবেন, তাঁরা মহিলাদের জন্য কী করবেন, তা শুনে সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু এবার আমার কাছে কেউ ভোট চাইতেই এলই না।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জননী সেবা সংস্থার পরিচালক নূর বানু বলেন, ‘বিগত নির্বাচনগুলোতে আমরা দেখেছি পুরুষদের উপস্থিতি কম হলেও নারীরা দল বেঁধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তাই শুধু সংসদ নির্বাচনে নয়, সব নির্বাচনেই নারীদের ভাবনার বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
মহিলা পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক সুচরিতা দেব বলেন, নারীরা হচ্ছেন নীরব ভোটার। যে যা–ই বলুক, নির্বাচনে তাঁদের প্রভাবই বেশি। ভোটের দিন কেন্দ্রে তাঁরাই আগে যান। তবে এখনো নারীরা পুরুষ ভোটারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন। মোট ভোটারদের প্রায় অর্ধেকই নারী। নারীদের তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাই নির্বাচন এলে প্রার্থীর সমর্থকেরা পুরুষ ভোটারকেই উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। তাঁরা মনে করেন, বাড়ির পুরুষের মন জয় করতে পারলেই নারীদের ভোট পেয়ে যাবেন। কেউ বোঝার চেষ্টা করেন না যে নারীদেরও পছন্দের বিষয় আছে।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ইয়াসিন আলী নারীদের কাছে ভোট না চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যেকোনো নির্বাচনে নারী ভোট জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তাঁদের গুরুত্ব না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। বর্তমান সরকার নারীদের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছে। সেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নারীদের মন জয়ের জন্য আলাদা নারী দল করা হয়েছে। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদের সঙ্গে দেখা করে নৌকায় ভোট চাইছেন।