চতুর্মুখী লড়াইয়ের আভাস

ইয়াসিন আলী, জাহিদুর রহমান, হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ, ইমদাদুল হক
ইয়াসিন আলী, জাহিদুর রহমান, হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ, ইমদাদুল হক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে চতুর্মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলীকে করায় স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইমদাদুল হক। এ ছাড়া এখানে জাপার কেন্দ্রীয় নেতা হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুর রহমান নির্বাচন করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এ আসনের বর্তমান সাংসদ ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মো. ইয়াসিন আলী মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন। তিনি দশম সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকে ভোট করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হাফিজউদ্দিন আহম্মেদকে হারিয়ে সাংসদ হন। গত সোমবার নৌকা প্রতীক পেয়েই গণসংযোগ শুরু করেন তিনি। ওয়ার্কার্স পার্টির দুজন কর্মী জানান, দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও জনসমাগমের জায়গাগুলোতে নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। নৌকা প্রতীকে ভোট করায় খুবই সাড়া মিলছে। এ ছাড়া সাংসদ ইয়াসিন এলাকার মানুষের কাছে খুবই পরিচিত হওয়ায় প্রচারকাজ করতে আরও সুবিধা হচ্ছে। এবার নৌকা প্রতীকের সঙ্গে অন্য প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান সাংসদ মো. ইয়াসিন আলী বলেন, ‘নৌকা প্রতীকে পেয়ে ভোটে প্রচারকাজ করতে গিয়ে ভোটার ভাইবোনদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। গত পাঁচ বছরে উন্নয়নকাজে, সুখে–দুঃখে দুই উপজেলার মানুষ আমাকে খুব কাছে পেয়েছে, তাই প্রচারকাজে খুবই সুবিধা হচ্ছে। এবার নির্বাচিত হলে আমার অসমাপ্ত উন্নয়নকাজ সমাপ্ত করতে পারব। মানুষ আমাকেই নির্বাচিত করবেন বলে আশা করি।’

মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সাংসদ হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ মহাজোটের মনোনয়ন না পেয়ে দলের নির্দেশে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তিনি অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের সাংসদ নির্বাচিত হন। হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আমি ২০০১ সাল থেকে টানা ১০ বছর সাংসদ ছিলাম এ আসনে। সে সময় পীরগঞ্জ-রানীশংকৈলে ব্যাপক উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে এবং এলাকার মানুষ আমার সেবা ও ভালোবাসা পাওয়ায় এখনো আমাকে ভোলেননি। তাই আমাকে এবার তেমন একটা ভোট চাইতে হচ্ছে না—মানুষের কাছ থেকে যেভাবে সাড়া পাচ্ছি, তাতে এবারও তাঁরা আমাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে আশা করি।’

এ আসনের সাবেক সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. ইমদাদুল হক মনোনয়ন না পেয়ে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোটরগাড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচন হন। ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমি সুদিন-দুর্দিনে মানুষের কাছে থেকে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে রেখেছি। আমি পীরগঞ্জ-রানীশংকৈলের মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিত। আমার মোটরগাড়ি প্রতীকে ভোট পাওয়ার আশায় মানুষের কাছে গিয়ে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। দল এবং মানুষের জন্য আমার ত্যাগের কথা মানুষ ভোলেনি। যেখানে যাচ্ছি, সেখানেই মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। আমার শেষ বয়সে মানুষ এবার আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে আশা করি।’
ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুর রহমান এবারও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। জাহিদুর রহমান বলেন, ‘দুই উপজেলার নেতা–কর্মীদের নিয়ে ভোট করছি। আমি ’৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তৃতীয় এবং ২০০৮ সালে দ্বিতীয় হয়েছি। দুই উপজেলার গ্রামগঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় ভোটারদের কাছ থেকে খুবই আন্তরিক ব্যবহার পাচ্ছি। ভোটের অনুকূল পরিবেশ পেলে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি জয় পাব বলে আশা করি।’
তবে পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলার কয়েকজন রাজনীতিবিদ বলেন, উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি গোপাল চন্দ্র রায়ের বাতিল হওয়া প্রার্থিতা উচ্চ আদালত বহাল করেন এবং তিনি সিংহ প্রতীক পান। গোপাল চন্দ্র সক্রিয়ভাবে ভোট করলে ভোটের হিসাব-নিকাশে পরিবর্তন আসতেও পারে।