ভয়ে শাওনও ছাদে উঠেছিলেন

হোলি আর্টিজান হামলা মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী (বাঁ থেকে দ্বিতীয়), রাশেদুল ওরফে র‍্যাশ ও হাদিসুর রহমান সাগরকে (পেছনে) আদালতে নিচ্ছে পুলিশ। গতকাল ঢাকার নিম্ন আদালতে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে।  ছবি: প্রথম আলো
হোলি আর্টিজান হামলা মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী (বাঁ থেকে দ্বিতীয়), রাশেদুল ওরফে র‍্যাশ ও হাদিসুর রহমান সাগরকে (পেছনে) আদালতে নিচ্ছে পুলিশ। গতকাল ঢাকার নিম্ন আদালতে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। ছবি: প্রথম আলো
>* হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা
* সেই রাতে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে আটক করা হয়েছিল স্প্লিন্টারবিদ্ধ শাওনকে।
* পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার রাতে সারা শরীরে স্প্লিন্টারবিদ্ধ অবস্থায় আটক হওয়া জাকির হোসেন (শাওন) পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তাঁকে ‘সন্দেহভাজন’ ব্যক্তি হিসেবে সেই রাতে আটক করা হয়েছিল। যদিও পরে পুলিশের তদন্তে তাঁর জঙ্গি-সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বেকারিতে শাওনের অবস্থান ও তৎপরতা সম্পর্কে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁর সহকর্মী মুন্না দেওয়ান। গতকাল সোমবার ছিল সাক্ষ্য গ্রহণের চতুর্থ দিন।

বিচারক মো. মুজিবুর রহমানের আদালতে মুন্না দেওয়ান বলেন, তিনি ও শাওন হোলি আর্টিজানের পিৎজা প্রস্তুতকারক সাইফুল চৌকিদারের সহকারী ছিলেন। বেকারির নিচতলায় পিৎজা বানানো হতো। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি ভাত খেতে বেকারির দোতলায় যান। এর প্রায় ১৫ মিনিট পর দেখেন, নিচতলায় সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। সন্ত্রাসী ঢুকেছে, সবাই পালাও-এমন আওয়াজ শুনে মুন্না দেওয়ান ছাদে উঠে যান। সেখানে গিয়ে তিনি আর্জেন্টিনার শেফ দিয়েগো, মামুন ও শাওনকে দেখেন। তাঁরা সবাই ভয়ে ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রাত তিনটার দিকে দিয়েগো ও মামুন ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি দুজন সন্ত্রাসীর কথা শোনেন। তাঁরা বলছিলেন, ‘কেউ কি এখানে আছে’। তখন তিনিও লাফ দিয়ে পাশের বাড়ির বাগানে গিয়ে পড়েন। ওই বাগানে আরও কয়েকজন পড়ে ছিলেন।

আদালতকে মুন্না দেওয়ান বলেন, লাফ দেওয়ার আগে শাওনকে ছাদের কোনায় দেখেন তিনি। পায়ে চোট পাওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে শাহজাদপুরের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। শাওন ঠিক কোন সময়টায় লাফ দেন, তা দেখেননি তিনি। তবে শাওন মারা গেছেন শুনে অসুস্থ শরীরেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সাইফুল চৌকিদারের (জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল) সঙ্গেও তাঁর আর দেখা হয়নি।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজানে হামলা ও জিম্মি দশার অবসানের আগেই শাওনকে রক্তাক্ত অবস্থায় বেকারির পেছন থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। দুদিন পর ৩ জুলাই রাতে ঢাকা তাঁকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। পুলিশের কর্মকর্তারা তখন ‘সন্দেহভাজন’ ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে মন্তব্যও করেছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জুলাই তিনি মারা যান। শেষ পর্যন্ত শাওন এবং সাইফুল চৌকিদার সম্পর্কে পুলিশের কাছ থেকে পরিষ্কার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফলে জঙ্গি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে সরকার ক্ষতিপূরণ দিলেও শাওন ও সাইফুলের পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি।

এদিকে দুই আসামি রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‍্যাশ ওরফে আসলাম ও রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যানের আইনজীবী ফারুক আহমেদ গতকাল আদালতকে বলেন, সাক্ষী মুন্নাকে পুলিশ সবকিছু শিখিয়ে-পড়িয়ে এনেছে। কারণ, তিনি পুলিশের কাছে দেওয়া সাক্ষ্যে ঘটনার দিন রাতে ভাত খেতে ওপরে যাওয়ার কথা বলেননি। এখন বানিয়ে বানিয়ে বলছেন।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আদালতকে অতিরিক্ত তথ্য জানানোয় কোনো ক্ষতি নেই।

গতকাল হোলি আর্টিজানের আরেক কর্মী আরিফ মো. শাওনও সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বেকারির কফি বানাতেন। আদালতকে আরিফ বলেন, সেই রাতে কেনাকাটা সেরে বেকারিতে ঢুকছিলেন তিনি। বেকারির বাইরে একজন গাড়িচালককে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। তাঁর পরামর্শে হোলি আর্টিজানে না ঢুকে পাশের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন।

এদিকে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মুজিবুর রহমান একই ধরনের এতজন সাক্ষী আদালতে হাজির করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

গতকাল পর্যন্ত এই মামলায় আটজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ মামলার মোট সাক্ষী ২১১ জন। ২৩ ডিসেম্বর আদালত সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।