খুলনায় এক পক্ষ সরব, ইভিএমে কৌতূহল

>* ছয়টি আসনে প্রচারণা
* মোট প্রার্থী ৩৫
* একটি আসনে দুই বড় জোটের দুই প্রার্থী একেবারে নতুন

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের ৩৫ জন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। দুটি আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীরা আবারও মুখোমুখি হয়েছেন। একটি আসনে দুই বড় জোটের দুই প্রার্থীই একবারে নতুন। তাঁরা জীবনে প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

সব আসনেই সরকারদলীয় প্রার্থীরা জমজমাট প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থীরা কমবেশি প্রচারণা চালালেও নানা ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়ছেন। বাকি প্রার্থীদের প্রচারণা এখনো চোখে পড়ার মতো নয়।

খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা)
এ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাঁচজন প্রার্থী লড়ছেন। দীর্ঘদিন ধরে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ আসন থেকে একবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার নৌকার প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাসের পাশাপাশি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সুনীল শুভ রায়ও মাঠে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ ননী গোপাল নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে।

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী আমীর এজাজ খান। বিএনপির ভোট ব্যাংকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের প্রার্থী আবু সাঈদ ভাগ বসাবেন বলে জোরেসোরে আলোচনা চলছে। সিপিবির প্রার্থী অশোক কুমার সরকারও প্রচারণায় সক্রিয়।

খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা)
দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে সাতজন প্রার্থী লড়ছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন নতুন মুখ ব্যবসায়ী শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাইয়ের ছেলে। তাঁর কোনো দলীয় পদ নেই। এই আসনের বর্তমান সাংসদ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান এবার মনোনয়ন ফরমই কেনেননি।
একই আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমানকে পরাজিত করেছিলেন ১ হাজার ৬৭০ ভোটের ব্যবধানে। তবে এ বছরই অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করে হেরে যান নজরুল ইসলাম।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনে খুলনা-২ থেকে জাতীয় পার্টি (জেপি) রাশিদা করিমকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন মিজানুর রহমান। বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল।
এবার এ আসনের ১৫৭টি কেন্দ্রেই থাকছে না কোনো ব্যালট আর ব্যালট বাক্স। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করবেন। এ নিয়ে খুলনায় ভোটারদের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে।
নগরের টুটপাড়া এলাকার সেলিম রিয়াজ বলেন, ‘ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দেওয়ায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। এখানে কোনো ব্যালট পেপার, সিলের কারবার নাই। আমরা তরুণ প্রজন্ম আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলব এটাই স্বাভাবিক।’ নাজিরঘাট এলাকার মনিরুল ইসলাম নামের এক ভোটার বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট কতটা স্বচ্ছ হবে জানি না। এটা নিয়ে কৌতূহল কাজ করছে।

খুলনা-৩ (সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ১ থেকে ১৫ এবং দিঘলিয়া উপজেলার আঢ়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন)
এ আসনে আসন্ন নির্বাচনে লড়ছেন পাঁচজন প্রার্থী। একজন নতুন মুখ। আরেকজন এর আগে তিনবার নির্বাচনে অংশ নেন। আওয়ামী লীগের হয়ে মাঠে নেমেছেন সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, বর্তমান সাংসদ বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা রকিবুল ইসলাম।
২০১৪ সালের নির্বাচনে মন্নুজান সুফিয়ান স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান খানকে ৩৯ হাজার ৫২৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মন্নুজান পরাজিত করেন বিএনপির প্রার্থী সেকেন্দার আলীকে। তবে ’৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আশরাফ হোসাইনের কাছে হেরে যান মন্নুজান সুফিয়ান।

খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দীঘলিয়া)
এ আসনে লড়ছেন ৬ জন প্রার্থী। সাবেক ফুটবলার ও ব্যবসায়ী আবদুস সালাম মুর্শেদী এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। কয়েক মাস আগে তিনি উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী বর্তমানে বাংলাদেশে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি।
এখানে বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল। ২০০৮ সালে তিনি ঢাকা-১৮ থেকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুনের কাছে হেরে যান। এবার প্রথম তিনি খুলনার আসন থেকে লড়ছেন।

খুলনা-৫ আসন (ডুমুরিয়া-ফুলতলা)
এ আসন থেকে লড়ছেন পাঁচজন। আওয়ামী লীগের হয়ে মাঠে রয়েছেন মৎস্য ও প্রানিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দ। বিএনপি আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছে। ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পরওয়ার। জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহিদ আলমও মাঠে রয়েছেন। তবে প্রচারে তিনি খুব বেশি সরব নন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী জোরেসোরে প্রচারণা চালালেও ধানের শীষের প্রার্থী প্রচারণায় বাধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি ফুলতলা এলাকায় দুটি জায়গায় জামায়াতের লোকজন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বোমা হামলা ও আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ। তবে এসব আওয়ামী লীগের সাজানো নাটক বলে দাবি করেন গোলাম পরওয়ার।

খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা)
এবার লড়ছেন সাত প্রার্থী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের প্রার্থী দুজনই এখানে নতুন মুখ। আওয়ামী লীগ থেকে লড়ছেন আকতারুজ্জামান বাবু। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বর্তমান সাংসদ শেখ মো. নুরুল হক আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চারবার নির্বাচন করে ’৯৬ ও ২০১৪ সালে সাংসদ হন। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি।
এ আসন থেকে বিএনপি জোটের হয়ে ধানের শীষ নিয়ে লড়ছেন খুলনা মহানগর জামায়াতের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। নির্বাচনে প্রথম লড়াইটা তিনি করছেন কারাগার থেকে। নবম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপি জোটের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন জামায়াতের শাহ মো. রুহুল কুদ্দুস।