সদলবলে বিএনপির প্রার্থী, জাপার সাংসদ 'দলছুট'

দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী মোরশেদ মিলটনের প্রচারণা। গতকাল সকালে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রানীরহাট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী মোরশেদ মিলটনের প্রচারণা। গতকাল সকালে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রানীরহাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে ধানের শীষের প্রচারণা জমজমাট। বিএনপির প্রার্থী মোরশেদ মিলটন দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে এই আসনে মহাজোটের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মুহাম্মদ আলতাফ আলী অনেকটা একা একা প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি দলছুট। তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নেই। নেই নিজ দল জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা-কর্মীরাও।

গাবতলী উপজেলায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্ম। এ কারণে আসনটি ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত আসনটিতে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালে ‘একতরফা’ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি সমঝোতায় জাপাকে ছেড়ে দেয়। এতে জেপির (মঞ্জু) প্রার্থী এ টি এম আমিনুল ইসলামকে হারিয়ে সাংসদ হন আলতাফ আলী। তিনি ভোট পান ১৭ হাজার ৮৭৯। এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৬৯। এবার এই আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল হলে দলীয় প্রার্থী হন গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ মিলটন। মহাজোটের প্রার্থী হয়েছেন সাংসদ আলতাফ আলী।

গতকাল সোমবার দুই প্রার্থীই শাজাহানপুর উপজেলায় গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার রানীরহাট বাজার এলাকায় ভোটারদের কাছে ধানের শীষের প্রচারণা চালান মোরশেদ মিলটন। পরে তিনি প্রচারণা চালান আশেকপুর ইউনিয়নে। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক তাঁর সঙ্গে ছিলেন। মোরশেদ মিলটন ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই আসনে এত দিন চেয়ারপারসনকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই আসনে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। শাজাহানপুরকে উপজেলা ঘোষণা করা হয়েছে। এবার খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ধানের শীষে একটি করে ভোট চাই।’

উপজেলার বয়রাদীঘির বাসিন্দা মো. হারুন বলেন, ভোটের দিন পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী মাঠে থাকলে এবার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।

নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন মহাজোট মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আলতাফ আলী। গতকাল দুপুরে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নয় মাইল হাটে।  ছবি: প্রথম আলো
নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন মহাজোট মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আলতাফ আলী। গতকাল দুপুরে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নয় মাইল হাটে। ছবি: প্রথম আলো

রানীরহাট এলাকায় আরও ১০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, বিষয়টা খুব ভালো। এবার মানুষ অন্তত তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। ভোট মনের বিষয়। এখানে জোর করার কিছু নেই। শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ দরকার। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে শরিক দল জামায়াতের বিতর্কের কারণে অনেকে ভোট দেওয়া নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। অনেকের মতে, ভোট দেওয়ার মতো যোগ্য প্রার্থীর অভাব রয়েছে এই আসনে।

লাঙ্গলের প্রার্থী আলতাফ গতকাল শাজাহানপুর উপজেলার নয় মাইল এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। বাজারের লোকজনের হাতে দলীয় প্রতীকসংবলিত পোস্টার দিয়ে তিনি ভোট চেয়েছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ১২ জনের একটি দল ছিল। সকালে আড়িয়াবাজার হয়ে নয় মাইল এলাকায় ভোটারের কাছে যান সাংসদ। তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এ কারণে লোকজন তাঁকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।

গতকাল নয় মাইল এলাকায় ২০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, আলতাফ আলীকে এই প্রথম এলাকায় দেখা গেছে।

গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা আবদুর রাজ্জাক বলেন, মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির আলতাফ আলী। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁর নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত হয়ে বসে আছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রার্থীর কোনো খবর নেই।

গাবতলী উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, জাতীয় পার্টির কারও সঙ্গে আলতাফ আলীর গত পাঁচ বছরে কোনো যোগাযোগ ছিল না। এখনো তিনি যোগাযোগ করেননি। গাবতলীতে তিনি গণসংযোগও করেননি।