লতিফ সিদ্দিকীর জন্মদিন কাটছে অনশনে

লতিফ সিদ্দিকীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন টাঙ্গাইল হাসপাতাল জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। ছবি: প্রথম আলো
লতিফ সিদ্দিকীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন টাঙ্গাইল হাসপাতাল জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। ছবি: প্রথম আলো

আমরণ অনশনে থাকা টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। চিকিৎসকরা তাঁকে ওষুধ খাওয়ার ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার লতিফ সিদ্দিকীর ৮২তম জন্মদিন। তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী। তিনিও স্বামীকে ওষুধ খেতে অনুরোধ করেন। তবে লতিফ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, তাঁর মৃত্যু হলেও তিনি দাবি পূরণ না হলে অনশন ভাঙবেন না।
প্রবীণ রাজনীতিক গত রোববার দুপুর থেকে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে তাঁর গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি শুরু করেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য লতিফ সিদ্দিকী হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন। তাঁর সমর্থকেরা জানান, এই কর্মসূচি শুরু করার পর থেকে তিনি খাবার খাননি। আজ সকালে বৃষ্টির সময় লতিফ সিদ্দিকীসহ তাঁর শুয়ে থাকা চৌকিটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বারান্দায় তোলা হয়। দুপুরের পর ওই কার্যালয়ের সামনে একটি শেডের নিচে নেওয়া হয় লতিফ সিদ্দিকীকে।

দুপুরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মোফাজ্জল হোসেন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুজাউদ্দিন তালুকদার ও রাশেদুল হাসান লতিফ সিদ্দিকীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা জানান, লতিফ সিদ্দিকীর হৃদস্পন্দন কমে গেছে। রক্তচাপও বেড়েছে। এর আগে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর ধমনিতে স্টেন্ট পরানো রয়েছে। ওষুধ খাওয়া বাদ দেওয়ায় তিনি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। চিকিৎসকরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

লতিফ সিদ্দিকীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন টাঙ্গাইল হাসপাতাল জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। ছবি: প্রথম আলো
লতিফ সিদ্দিকীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন টাঙ্গাইল হাসপাতাল জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। ছবি: প্রথম আলো

সোমবার টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলামকে একটি চিঠি দেন লতিফ সিদ্দিকী। চিঠির বিষয় ছিল ‘প্রতিকারহীনতার ও কালক্ষেপণের কারণে অবস্থান ধর্মঘটের সঙ্গে আমরণ অনশন প্রসঙ্গে।’
গতকাল চিঠিতে লতিফ সিদ্দিকী লেখেন, ‘আমার ধর্মঘটের ৮ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। কিন্তু কোনো প্রতিকার না পেয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম একই সঙ্গে আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার। আমার যদি কোনো ক্ষতি হয় সে জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী থাকবে বলে ঘোষণা দিচ্ছি।’
লতিফ সিদ্দিকীকে দেখতে তাঁর নির্বাচনি এলাকা কালিহাতীসহ টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছেন।

রোববার দুপুর ১২টার দিকে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জন্য লতিফ সিদ্দিকী গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের সরাতৈল গ্রামে যান। এ সময় রেললাইনের পাথর দিয়ে ঢিল ছোড়া হয়। পরে লতিফ সিদ্দিকী তাঁর বহর নিয়ে বল্লভবাড়ি গ্রামে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মহির উদ্দিনের বাড়িতে যান। পরে সেখানে হামলাকারীরা গিয়ে তাঁর বহরের চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় তাঁর কয়েকজন কর্মী আহত হন।

আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৭০, ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। তাঁর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১৯৮৬ সালে এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ থেকে ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হন। ২০১৪ সালে ধর্মীয় বিষয়ে কটূক্তি করে নিউইয়র্কে একটি সভায় বক্তৃতা দেওয়ার পর তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এতে আসনটি শূন্য হওয়ার পর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে হাসান ইমাম খান সাংসদ নির্বাচিত হন। হাসান ইমাম খান এবারও আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।