পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ হাসান-ইলিয়াসদের

নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও নিজ দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর বিক্ষোভ মিছিল। মিরপুর, ১৮ ডিসেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও নিজ দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর বিক্ষোভ মিছিল। মিরপুর, ১৮ ডিসেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ করেছেন ঢাকা-১৬ (মিরপুর-পল্লবী) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ও বিএনপির প্রার্থী আহসান উল্লাহ হাসান। তাঁরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলার অভিযোগ এনেছেন।

এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষ থেকে একটি মামলাও হয়েছে। আর বিএনপির প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁরা মামলা করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি। এ জন্য উচ্চ আদালতই তাঁদের শেষ ভরসা।

বিএনপির প্রার্থী আহসান উল্লাহ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গত রোববার তাঁর স্ত্রী রিনা হাসান ও শ্যালিকা কয়েকজন কর্মী-সমর্থক নিয়ে মিরপুর-৬–এর ডি ব্লকের মসজিদের কাছে নির্বাচনী লিফলেট বিতরণ করতে যান। এ সময় ইলিয়াস মোল্লাহর লোকজন তাঁদের ওপর হামলা করে। পরে সেখান থেকে পল্লবী থানার পুলিশ রিনা হাসান ও তাঁর বোনকে থানায় নিয়ে যায়।

হাসানের ভাষ্য, তাঁর স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় আটকের পর পুলিশ তাঁর স্ত্রী ও শ্যালিকাকে ছেড়ে দেয়। তবে ওই দিনের হামলায় তাঁর স্ত্রীকে এখনো চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিএনপির লোকজনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন। সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, হাসানের লোকজন তাঁর লোকজনকে মারধর করেছে। রোববারের ওই হামলায় আওয়ামী লীগের তিনজন নারী সমর্থক আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া গতকাল সোমবার রাতে হাসানের বাড়ির পাশে থাকা ইলিয়াস মোল্লাহ নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে।

ইলিয়াস মোল্লাহ তাঁর নির্বাচনী ওই অফিস ভাঙচুরের বিষয়ে অভিযোগ করেন, হাসানের লোকজন অফিস ভাঙচুরের পাশাপাশি সেখানে থাকা বঙ্গবন্ধুর, শেখ হাসিনার, তাঁর নিজের ছবি ও বাংলাদেশের পতাকা ছিঁড়ে ফেলেছে। তিনি জানান, এই ভাঙচুরে বিষয়ে আজ তাঁর পক্ষে থেকে হাসানের লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টি অসত্য বলে দাবি করা হয়েছে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে আহসান উল্লাহ হাসানের স্ত্রী রিনা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাঙচুর তো দূরের কথা আমাদের কেউ তো মাঠে দাঁড়াতেই পারছে না। কারা এটা করেছে বলতে পারছি না। আমাদের ওপর হামলার ব্যাপারে পল্লবী থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। এখন হাইকোর্টে মামলা করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। থানায় আমাকে ও আমার বোনকে আটকে রাখা হয়েছিল।’

রিনা হাসান আরও বলেন, ‘প্রথমে সোহরাওয়ার্দী পরে ঢাকা মেডিকেল সর্বশেষ মিরপুরের আল-সাফী হাসপাতালে ভর্তি হই। কিন্তু গতকাল রাতে ইলিয়াস মোল্লাহর লোকজন হাসপাতালে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে। পরে আজ মঙ্গলবার সকালে আল-সাফী থেকে বাধ্য হয়ে রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে আসি।’

জানতে চাইলে পুলিশের মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির প্রার্থীর পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। তাঁরা লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। ইলিয়াস মোল্লাহ মামলার ব্যাপারে বলেন, মামলাটি পল্লবী থানায় হয়েছে।

বিএনপির প্রার্থী আহসান উল্লাহ হাসান আরও বলেন, তাঁর ও তাঁর শ্বশুরবাড়ি মিরপুর-৬–এর ব্লক সির ১৩ নম্বর সড়কে। গত শনিবার বিকেলে তাঁর সমর্থকেরা নির্বাচনী প্রচারে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ইলিয়াস মোল্লাহর লোকজন তাঁদের বাড়ি ঘেরাও করে রাখায় সেদিন তাঁরা বের হতে পারেননি। পরে রোববার তাঁর স্ত্রী ও শ্যালিকা প্রচারে গেলে হামলার ওই ঘটনা ঘটে। আহসান আরও জানান, তাঁর বিরুদ্ধে ৬০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি জামিন নিয়েছেন। দুই–এক দিনের মধ্যে জামিনের সার্টিফায়েড কপি নিয়ে তিনি নিজে নির্বাচনী প্রচারে নামবেন।

এদিকে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও নিজ কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ইলিয়াস মোল্লাহ। মিছিলটি হাসানের বাড়ির সামনের সড়ক দিয়ে যায়। এ সময় মিছিল থেকে হাসান ও বিএনপির বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়।