ভোটের রাজনীতিতে ডিগবাজি

শামসুল হুদা চৌধুরী
শামসুল হুদা চৌধুরী

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন এরশাদ সরকারের জাতীয় সংসদের স্পিকার শামসুল হুদা চৌধুরী। অভিজ্ঞ এ রাজনীতিক ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের সংসদে এরশাদের জাতীয় পার্টির টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির আগে যুক্ত ছিলেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ময়মনসিংহ থেকে মনোনয়ন পান। কিন্তু জীবনের শেষ নির্বাচনটিতে হেরে গিয়েছিলেন। ছিয়ানব্বইয়ের নির্বাচনের পর মারা যান বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক।

শামসুল হুদা চৌধুরী বাংলাদেশের দলছুটদের নির্বাচনের ইতিহাসে একটি উদাহরণ মাত্র। তবে ‘তারকা’ দলছুটদের ইতিহাসও কম লম্বা নয়। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন, কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দল ত্যাগ করে জিয়াউর রহমানের বিএনপি করেছেন, এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে থেকেছেন—এমন রাজনীতিকের সংখ্যা নেহাতই কম নয়।

এরশাদ সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেনের কথাই ধরা যাক। একসময় ছাত্রলীগের ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ও দ্বিতীয় সংসদে চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দল পাল্টে খন্দকার মোশতাকের ডেমোক্রেটিক লীগের রাজনীতি করেছেন, জিয়াউর রহমানের বিএনপিতে যোগ দেওয়ারও ‘প্রস্তাব’ ছিল তাঁর কাছে। কিন্তু ব্যাটে-বল না মেলায় সেটি হয়নি। ১৯৮২ সালে এরশাদ ক্ষমতায় এলে তাঁর রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জনদল থেকে জাতীয় ফ্রন্ট হয়ে জাতীয় পার্টি হয়েছিল। দলটির মহাসচিবও হয়েছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করে হেরে যান।

রাজনৈতিক জীবনে নৌকা, লাঙ্গল আর ধানের শীষ—তিন প্রধান প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরল কৃতিত্বে তিনি সাবেক স্পিকার শামসুল হুদা চৌধুরীর সঙ্গী। এমনই আরেক ‘ভাগ্যবান’ নেতা শামসুল হুদার চৌধুরীর ডেপুটি রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া। রংপুরের এই রাজনীতিক আওয়ামী লীগ থেকে জিয়ার বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। পরে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।

মওদুদ আহমেদ
মওদুদ আহমেদ

এরশাদ সরকারের উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। তবে এর আগে তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন। রাষ্ট্রপতি জিয়ার সঙ্গে মতদ্বৈততায় সরকার থেকে ছিটকে পড়েন। আশির দশকে এরশাদের সঙ্গে তাঁর ভেড়াটা ছিল দারুণ রাজনৈতিক চমক। ১৯৮২ সালে এরশাদ সামরিক শাসন জারি করার পর বিশেষ সামরিক আদালতে ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন এই রাজনীতিক। ১৯৮৫ সালে সেই দণ্ড মাথায় নিয়েই এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতি হন মওদুদ আহমেদ। এরশাদের পতনের পর ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টিতে ছিলেন। এর পরপরই ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফেরা’র মতোই বিএনপিতে ফিরে আসেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তিনি আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মওদুদ আহমেদ ধানের শীষ ও লাঙ্গল—দুই প্রতীকেই নির্বাচন করেছেন।

মিজানুর রহমান চৌধুরী
মিজানুর রহমান চৌধুরী

দুটি বড় দলের প্রতীকে নির্বাচন করার ইতিহাস আছে এরশাদ সরকারের আরেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীরও। খ্যাতিমান এই রাজনীতিবিদ একসময় ছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বে। নৌকা প্রতীকে নিজ জেলা চাঁদপুর থেকে জিতেছেন একাধিক নির্বাচন। তিনি পরবর্তী সময়ে এরশাদের দলে যোগ দিয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ১৯৮৬, ১৯৮৮ আর ১৯৯১ সালে নির্বাচন করেন। মিজানুর রহমান চৌধুরী ১৯৭৯ সালে অবশ্য অন্য একটি প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন।
জিয়াউর রহমানের সময় সে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়েছিল। মূল আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে মিজান চৌধুরী গঠন করেছিলেন ব্রাকেটবন্দী এক আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে সেবার আওয়ামী লীগের সে অংশটি লড়েছিল মই মার্কা নিয়ে। চাঁদপুর থেকে মই নিয়েও নির্বাচিত হতে অবশ্য সমস্যা হয়নি এই অভিজ্ঞ রাজনীতিকের।

মওদুদ আহমেদের মতোই জাতীয় পার্টি ও বিএনপি—দুই বড় রাজনৈতিক দলের ‘জার্সি’তেই নির্বাচন করেছেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তিনি ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে তাঁর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর মুসলিম লীগের প্রার্থী ছিলেন। ‘হারিকেন’ প্রতীক নিয়ে তিনি সেবার প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে এরশাদ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে ১৯৮৬ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি এরশাদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) নামের একটি দল গঠন করেছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এনডিপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। পরের নির্বাচনেই তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য ছিলেন। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তিনি ছিলেন বিএনপি সরকারের সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির সময়ও চট্টগ্রামের একটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

একাধিক দল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কিংবা মওদুদ আহমেদরা সব সময়ই বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু ছোট রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া অনেক নেতাই পরবর্তীকালে বড় দলের পতাকাতলে এসে সংসদ সদস্য, এমনকি মন্ত্রিত্বের স্বাদ পেয়েছেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রনেতৃত্বের ‘চার খলিফা’র ‘এক খলিফা’খ্যাত শাহজাহান সিরাজ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে (জাসদ) যোগ দিয়েছিলেন। জাসদের হয়ে টাঙ্গাইল থেকে ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে জাসদের একাংশের নেতৃত্বে থেকে ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। । ১৯৯১–৯৬ বিএনপি সরকারের শেষ দিকে নিজের দল বিলুপ্ত করে দিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী হন তিনি। পরে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী হন।

বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। পরে জিয়াউর রহমানের আমলে বিএনপিতে যোগ দিয়ে তিনি ১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্য হন। বিএনপি ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এ সময় তিনি দলটির মহাসচিব ছিলেন। পরে রাজনৈতিক মতদ্বৈততায় বিএনপি ত্যাগ করে বাংলাদেশ জনতা দল নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন কে এম ওবায়দুর রহমান।

১৯৯১ সালে নিজের আসন ফরিদপুর-২ থেকে জনতা দলের চাকা মার্কায় নির্বাচন করে হেরে যান আওয়ামী লীগের সাজেদা চৌধুরীর কাছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে ফিরে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন।

এখন বিলুপ্ত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশালের আরেক ডাকসাইটে নেতা সরদার আমজাদ হোসেনের উদাহরণও এখানে টানা যেতে পারে। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তিনি রাজশাহীর একটি আসন থেকে বাকশালের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর কিছু দিন পরেই তিনি সঙ্গী দুই বাকশাল সংসদ সদস্যকে নিয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে তিনি লাঙ্গল প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর অবশ্য তিনি আওয়ামী লীগে ফিরে গিয়েছিলেন।

সংসদীয় গণতন্ত্রে দল পরিবর্তনের সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে ১৯৯৬ সালের সংসদে। রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপি–দলীয় সদস্য ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। সঙ্গে ছিলেন সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের আরেক বিএনপি–দলীয় সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন। ডা. আলাউদ্দিন একসময় আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। ১৯৯৬ নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনায়ন না পেয়ে তিনি যোগ দেন বিএনপিতে। প্রথমে দাবি করা হয়, তাঁরা দুজন বিএনপির সংসদ সদস্য হিসেবেই ‘জাতীয় ঐকমত্যে’র সরকারে যোগ দিয়েছেন। বিএনপি তাঁদের বহিষ্কার করলে সংসদীয় আসন শূন্য হয়। পরে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে ডা. আলাউদ্দিন জিতলেও হাসিবুর রহমান স্বপন সিরাজগঞ্জে হেরে যান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে। স্বপনও দল পরিবর্তনে কম যাননি। ১৯৮৮ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য স্বপন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে একসঙ্গে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। পরে বিএনপি থেকে তিনি নির্বাচন করেন। ডা. আলাউদ্দিন ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে গিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য হন। তিনিও ১৯৯৮ সালে জাতীয় ঐকমত্যের সরকারে যোগ দিয়ে আসলে নিজের ঘরেই ফিরেছিলেন।

এরশাদের জাতীয় পার্টির অনেক সাংসদই পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে সাংসদ হয়েছেন। এ তালিকা বেশ দীর্ঘই। উত্তরবঙ্গে জাতীয় পার্টি থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সাংসদ ফজলে রাব্বী পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের যোগ দেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন তিনি। পিরোজপুর-৩ আসনের ডা. রুস্তম আলী ফরাজি জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পরে তিনি আবার জাতীয় পার্টিতে ফিরেছেন। এককালে ছাত্রলীগের বড় নেতা মনিরুল হক চৌধুরী জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পরে তিনি বিএনপিরও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন পাঁচজন। এঁদের মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বিলীন হয়ে যান। পঞ্চগড়-২ আসনে সে সময় সিপিবির সাংসদ মোজাহার হোসেন পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। সুনামগঞ্জের একটি আসনে নির্বাচিত নজির হোসেন যোগ দিয়েছিলেন বিএনপিতে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগে গিয়েছিলেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের দবিরুল ইসলাম। 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ডিগবাজি খুব অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে করেন বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ। যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আদর্শের উপস্থিতি খুবই সীমিত, যেখানে ব্যক্তিকেন্দ্রিক লাভালাভের বিষয় থাকে, সেখানে এমনটি হয়েই থাকে বলে মত তাঁর, ‘বাংলাদশের দলবদল অস্বাভাবিক কিছু নয়। সামরিক শাসনের সময় থেকেই এগুলো দেখে আসছি আমরা। দল বদলালে রাজনীতিকের ব্যক্তিগতভাবে লাভ হয়। এখানে আদর্শ গৌন বিষয়। আমাদের রাজনৈতিক দলের কাছে মূল ব্যাপার প্রার্থীর জিততে পারা। তাঁদের চাওয়া “উইনেবল ক্যান্ডিডেট”।’

মহিউদ্দিন আহমেদ উদাহরণ টেনে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১৯৭৮ সালে বিএনপি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন দলটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। পরে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব হিসেবে মন্ত্রিত্ব পান। পরে মূল জাতীয় পার্টি ভেঙে তিনি নিজেই একটি জাতীয় পার্টি গঠন করেন। একইভাবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন যিনি, সেই অধ্যাপক ইউসুফ আলী ১৯৮০ সালে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হন। এখানে আদর্শের কোনো ব্যাপার নেই। পুরোটাই ব্যক্তিগত লাভালাভ।’

৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দল পরিবর্তন কিংবা প্রতীক পরিবর্তনের বেশ কয়েকটি ঘটনা থাকছে। একসময়ের ডাকসু ভিপি, আওয়ামী লীগের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবার ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। একইভাবে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবেন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আলোচিত সংসদ সদস্য পটুয়াখালীর গোলাম মাওলা রনি এবার বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি এবার ধানের শীষের প্রার্থী। এটা এবারের নির্বাচনের আগে বড় চমক হিসেবেই ধরা হচ্ছে। একসময় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের জাঁদরেল নেতা মোস্তাফা মহসীন মন্টুও এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন ঢাকার একটি আসনে। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মাহী বি. চৌধুরীর এবার নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করাও কিন্তু নির্বাচনে কম বড় চমক নয়।