বিকল্পের খোঁজে বিএনপি

তাহসিনা রুশদীর
তাহসিনা রুশদীর

সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে বিএনপির প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনার মনোনয়নপত্র স্থগিত করে উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে তিনি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের এ আদেশ নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছার পর বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। তাহসিনা রুশদীরবিহীন নির্বাচনে বিএনপি এ আসনটিতে বিকল্প প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে লড়বে, না নির্বাচন থেকে সরে যাবে এ নিয়ে আলোচনায় সরব এখন নির্বাচনী এলাকা।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, সিলেট-২ আসনের বর্তমান সাংসদ ও মহাজোটের ব্যানারে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মো. ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ লঙ্ঘন করার অভিযোগ এনে বিএনপির প্রার্থী তাহসিনার প্রার্থিতার বিরুদ্ধে ১৩ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে রিট করেন। অভিযোগে ইয়াহ্ইয়া উল্লেখ করেন, নির্বাচনে অংশ নিতে হলে তাহসিনা রুশদীরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদ থেকে অবসরের পর তিন বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তিনি তা না করেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। পরে আদালত শুনানি শেষে তাহসিনার প্রার্থিতা স্থগিত করেন।

উচ্চ আদালতের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে তাহসিনা রুশদীর আবেদন করেন। এর শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গতকাল ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আদালত তাহসিনার মনোনয়ন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। জেলা বিএনপির একটি সূত্র তাহসিনার মনোনয়ন স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সারা দেশের মধ্যে সিলেট-২ আসনটি বিএনপির নিশ্চিত বিজয়ের একটি আসন ছিল উল্লেখ করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনগতভাবে তিনি (তাহসিনা রুশদীর) আর নির্বাচন করতে পারছেন না। এখন এই আসন নিয়ে আমাদের কী করণীয়, সেটা কেন্দ্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত হবে।’

বিএনপির প্রার্থী তাহসিনা দলটির ‘নিখোঁজ’ সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী। এরপর স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন তাহসিনা। এ অবস্থায় নির্বাচনী এলাকার দুটি উপজেলাতেই বিএনপিপন্থী প্রার্থী বিজয়ী হন। এমনকি অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিতরা জয়লাভ করেন।

এ আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দুটি দলের প্রার্থী রয়েছেন। এঁরা হচ্ছেন গণফোরামের মোকাব্বির খান ও খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাছির আলী।

নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ধারণা, তাহসিনা বাদ পড়ার পর প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের মুনতাছির আলীসহ স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী মুহিবুর রহমান এবং এনামুল হক সরদার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসতে পারেন। তবে বিএনপি যদি ঐক্যফ্রন্টের শরিক দুটি দলের কোনো একজন প্রার্থীকে সমর্থন জানায়, তাহলে তিনিও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসবেন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। সে নির্বাচনে ইয়াহ্ইয়া ৪৮ হাজার ১৫৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আর ১৭ হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মুহিবুর রহমান। অবশ্য ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে সমর্থন জানিয়েছিল। এবার এখনো স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেননি।