লাঙ্গলের ভরসা আ.লীগ, ঐক্যফ্রন্টের বিএনপি

একাদশ সংসদ নির্বাচন
একাদশ সংসদ নির্বাচন

ময়মনসিংহ–৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি তথা মহাজোট প্রার্থী ফখরুল ইমামের লাঙ্গলের হাল নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। নিজ দল জাতীয় পার্টির নড়বড়ে সাংগঠনিক শক্তির কারণে এত দিন বেকায়দায় ছিলেন ফখরুল ইমাম।
এদিকে বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও গণফোরাম নেতা এ এইচ এম খালেকুজ্জামান। অন্যদিকে হাজারো কর্মীর ওপর ভরসা করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদ হাসান। এভাবেই চলছে ময়মনসিংহ– ৮ ঈশ্বরগঞ্জ আসনের ত্রিমুখী নির্বাচনী প্রচারণা।
স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের পর থেকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ স্থানীয়-বহিরাগত ধুয়ো তুলে ফখরুল ইমামকে ঠেকানোর আন্দোলনে লিপ্ত ছিল। আন্দোলনকারীদের হাতে জাতীয় পার্টির নেতারা লাঞ্ছিত পর্যন্ত হয়েছেন। দলীয় কার্যালয় ও তোরণ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ওই পক্ষকে হতাশায় ডুবিয়ে মহাজোট থেকে মনোনয়ন বাগিয়ে নেন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম।
জাতীয় পার্টির দুজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার এক সমাবেশের আয়োজন করে ফখরুল ইমামকে বরণ করে নেন ঈশ্বরগঞ্জের সাবেক সাংসদ আবদুছ ছাত্তার ও তাঁর সমর্থকেরা। কিন্তু ওই বরণ অনুষ্ঠানে আবদুছ ছাত্তার আবেগাপ্লুত থাকায় ফখরুলের তেমন কোনো প্রাপ্তি ছিল না। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন না। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল থাকায় ফখরুল ইমাম নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় তিনি আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন চান। গত রোববার বর্ধিত সভা ডেকে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী ফখরুল ইমামের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে লাঙ্গল প্রতীকের প্রচারণা চলছে জোরালোভাবে।
এদিকে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ এইচ এম খালেকুজ্জামান গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী নেতা হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি আওয়ামী লীগের কাঁধে চেপেও তৃতীয় হয়েছিলেন। খালেকুজ্জামান উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের টাঙ্গনগাতী গ্রামের বাসিন্দা ও ময়মনসিংহ জেলা গণফোরামের সভাপতি। ২৭ বছর পর তিনি আবার ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলায় গণফোরামের সাংগঠনিক অস্তিত্ব নেই। তাই তাঁকে বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা মাঠে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে উজ্জীবিত হয়েছেন। তাঁদের উজ্জীবিত করে তুলেছেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ। তিনি নিজে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী খালেকুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় ও হাটবাজারে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নির্বাচন করছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। আমরা ভোটারের কাছে বিএনপির দলীয় প্রতীকে ভোট চাইছি। সাড়াও পাচ্ছি।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন মাহমুদ হাসান। স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, মাহমুদ হাসান আওয়ামী পরিবারের সন্তান। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি গড়ে তুলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেটি কাজে লাগাচ্ছেন। তিনি তাঁর কর্মীদের ওপর ভরসা করে ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে পর্যায়ে উঠান বৈঠক ও পথসভা করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মাহমুদ হাসান বলেন, ‘আমি নির্বাচনের লোক। পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। এখন সাংসদ পদে নির্বাচন করছি। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি।’