ওয়াক্কাস আত্মগোপনে
ভোটের বাকি আর মাত্র কয়েকটা দিন। যশোর-৫ আসনে (মনিরামপুর) ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে এখনো ভোটের মাঠে দেখা যায়নি। গ্রেপ্তারের ভয়ে তিনি আত্মগোপনে আছেন। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের নেতা–কর্মীরাও তাঁর পক্ষে নেই।
যশোর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ স্বপন ভট্টাচার্য ও ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের সাংসদ ছিলেন।
এবারের নির্বাচনে বিএনপি শেষ সময়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ ইকবাল হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়। হেলিকপ্টারে করে সেই মনোনয়ন উড়িয়ে যশোরে এনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু পরে কেন্দ্রীয় বিএনপি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকেই ধানের শীষ প্রতীকের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়। ক্ষোভে বিএনপির উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম মশিউর রহমানসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত আড়াই হাজার নেতা ও সদস্য গণপদত্যাগ করেন। এদিকে জামায়াতে ইসলামী থেকে জেলা কমিটির শুরা সদস্য গাজী এনামুল হক ধানের শীষ প্রতীক চেয়ে বঞ্চিত হন। নিজেদের দলের প্রার্থী না থাকায় উপজেলা বিএনপি ও জামায়াতের কোনো নেতা–কর্মী মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে এখনো মাঠে নামেননি। এমনকি ওয়াক্কাসের নিজের দলের নেতা–কর্মীও মাঠে নামেননি।
প্রতীক বরাদ্দের দিন ৯ ডিসেম্বর ওয়াক্কাসের ছেলের গাড়িতে দুই দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।
মুহাম্মদ ওয়াক্কাস হলফনামায় ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলায় জামিন বাতিল হয়েছে।
মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের ছেলে ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহকারী মহাসচিব মুহাম্মদ রশিদ আহমেদ বলেন, আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। যে কারণে তাঁর বাবা আত্মগোপনে রয়েছেন। নিজের ভোট দিতে আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনছার উদ্দীন বলেন, ‘মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের বিরুদ্ধে ঢাকার শাহবাগ থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের তিনটি মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পুলিশের খাতায় তিনি পলাতক।’
মনিরামপুরে গিয়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য প্রতিদিনই মনিরামপুর উপজেলার গ্রামে গ্রামে গিয়ে পথসভা ও গণসংযোগ করছেন। কিন্তু কোথাও ধানের শীষ প্রতীকের কোনো পোস্টার বা প্রচার মাইক নেই। বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীরা একেবারেই নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. মুসা ও আইনবিষয়ক সহসম্পাদক এম এ গফুরের নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি এখনো কাজ শুরু করেনি।
জানতে চাইলে মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সদ্য পদত্যাগী সাধারণ সম্পাদক এস এম মশিউর রহমান বলেন, ‘গত ১০ বছরে মনিরামপুর উপজেলার বিএনপির ১১ জন কর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। একজন কর্মীর জানাজায়ও মুহাম্মদ ওয়াক্কাস কখনো অংশ নেননি। কোনো কর্মীর বাড়িতেও তিনি যাননি। অথচ জোটবদ্ধ নির্বাচনে তাঁর পক্ষে কাজ করে আমরা ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁকে সাংসদ বানিয়েছিলাম। তিনি গত ১০ বছরে এলাকায় তেমন ছিলেন না।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ওয়াক্কাসের পক্ষ থেকে ভোটে কাজ করার জন্য কেউ কোনো আহ্বান জানায়নি।’ একই কথা বলেছেন মনিরামপুর উপজেলা জামায়াতের আমির লিয়াকত আলীও।
মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের ছেলে রশিদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছি। যেকোনো সময়ে আমরা যে কেউ গ্রেপ্তার হতে পারি। এ শঙ্কা থেকেই আমরা প্রচারে যাচ্ছি না। কোনো পোস্টারও টাঙানো হয়নি। তবে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য লোকজনকে বিভিন্ন মাধ্যমে বার্তা পাঠানো হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে শিগগিরই বসা হবে। তাদের প্রচারে নামানোর জন্য আলোচনা করব।’