ময়মনসিংহে জিততে মরিয়া দুই বড় দলই

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ময়মনসিংহের ১১টি আসনে বাড়ছে প্রার্থীদের প্রচারণা। কয়েকটি আসনে বিএনপির প্রচারে বাধা দেওয়া ও নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। তারপরও আওয়ামী লীগের পাশাপাশি নির্বাচনে জিততে মরিয়া বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা।

১১ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সিপিবিসহ ৯টি রাজনৈতিক দলের মোট ৫৭ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯টি দলের প্রার্থীরা অংশ নিলেও ৮টিতে মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বাকি ৩টি আসনে উন্মুক্তভাবে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ১১টি আসনের প্রতিটিতেই লড়ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা। 

ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া)

এখানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হচ্ছে, নির্বাচনের আর ১১ দিন বাকি থাকলেও গতকাল পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী কে, তা নিয়ে সংশয় দূর হয়নি। আলী আজগরকে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে মনোনয়ন বদল করে দেওয়া হয় আফজাল এইচ খানকে। আফজাল সময়মতো দলীয় চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিতে না পারায় এবং আলী আজগরের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ থাকায় হাইকোর্ট তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করলে দুজনই হাইকোর্টে যান। গতকাল দুপুরের পর নির্বাচনী এলাকায় খবর ছড়ায়, আফজাল এইচ খানের মনোনয়ন গ্রহণ করতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে গতকাল পর্যন্ত এখানে বিএনপির পক্ষে কোনো প্রচারণা ছিল না।

বর্তমান সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী জুয়েল আরেং ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হুমায়ুর মো. আবদুল্লাহ আল হাদীও প্রচারণা চালাচ্ছেন। 

ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা)

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ শরীফ আহমেদের বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন শাহ শহীদ সারোয়ার। এখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পুলিশ ব্যাপক হয়রানি করছে বলে অভিযোগ আছে। ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের পর বিএনপির দেড় হাজার নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়। বিএনপির প্রার্থী গতকাল নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় ১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ করেন। এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলদেশের গোলাম মাওলা ভুঁইয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক। 

ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর)

এখানে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আহমেদ ও বিএনপির প্রার্থী প্রকৌশলী এম ইকবাল হোসেইনের মধ্যে। দুই প্রার্থীই ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন বাজারে সভা ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে নিজের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাঁরা।

অন্য প্রার্থীরা হলেন সিপিবির হারুন আল বারী, জাকের পার্টির গোলাম মোহাম্মদ, ইসলামী আন্দোলনের মো. আইয়ুব আলী ও তরীকত ফেডারেশনের প্রাণেশ পণ্ডিত। 

ময়মনসিংহ-৪ (সদর)

মহাজোটের প্রার্থী রওশন এরশাদ ও বিএনপির প্রার্থী আবু ওয়াহাব আকন্দ। রওশনের পক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রচারণায় নেমেছেন। এ ছাড়া জাপার কর্মীরাও আছেন মাঠে। এ আসনে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচারণা চলছে। শহরের বিভিন্ন মোড়ে বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্প রয়েছে। অন্য প্রার্থীরা হলেন সিপিবির এমদাদুল হক মিল্লাত, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হামিদুল ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের নাসির উদ্দিন। 

ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা)

মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের কে এম খালিদ ও বিএনপির জাকির হোসেন বাবলুর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আশা করছেন এলাকাবাসী। এখানে মহাজোটের মনোনয়নবঞ্চিত জাপার বর্তমান সাংসদ সালাহউদ্দিন আহমেদ লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে করলেও তাঁর পক্ষে তেমন প্রচারণা নেই। অন্য প্রার্থীরা হলেন জাকের পার্টির জাহিরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের মঞ্জুরুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সামান মিয়া ও স্বতন্ত্র মোস্তফা কামাল। 

ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া)

এখানে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে চতুর্মুখী। আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন, বিএনপির শামছুউদ্দিন আহমেদ, জাপার কে আর ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলামের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছে দলীয় ও স্থানীয় সূত্র। আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, জেএসডির চৌধুরী মোহাম্মদ ইসহাক ও ইসলামী আন্দোলনের নুরুল আলম সিদ্দিকী। 

ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল)

এ আসনে আলোচনায় ছিলেন রওশন এরশাদ। জাপার কো–চেয়ারম্যান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী হলেও সম্প্রতি তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী রুহুল আমিন মাদানীকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাহবুবুর রহমান লিটন। অন্য প্রার্থী হলেন ইসলামী আন্দোলনের মো. আজিজুল হক। 

ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ)

বর্তমান সাংসদ ফখরুল ইমাম মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর বিপরীতে আছেন ঐক্যফ্রন্টের হয়ে গণফোরাম নেতা এ এইচ এম খালেকুজ্জামান এবং আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ মাহমুদ হাসান। এই তিনজনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছে দলীয় সূত্র ও সাধারণ ভোটাররা। মাহমুদ হাসান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তিনি পদত্যাগ করেন। খালেকুজ্জামান ১৯৯১ সালে ৮–দলীয় জোট থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার ২৭ বছর পর ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে ফিরেছেন। এখানে অন্য প্রার্থীরা হলেন মুসলিম লীগের সাইফুদ্দিন আহাম্মেদ, ইসলামী আন্দোলনের হাবিবুল্লাহ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবদ্দুল্লাহ আল মামুন ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এম এ বাশার। 

ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল)

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুল আবেদিন খান ও বিএনপির খুররম খান চৌধুরীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম। গতকাল অবশ্য তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অন্য প্রার্থীরা হলেন ইসলামী আন্দোলনের সাইদুর রহমান, জাকের পার্টির শরিফুল আলম ও জাপার মোহাম্মদ হাসনাত। 

ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও)

আওয়ামী লীগের ফাহমি গোলন্দাজ নির্বাচনী মাঠ দাবড়ে বেড়ালেও ঐক্যফ্রন্টের এলডিপির সৈয়দ মাহমুদ মোরশেদ অনেকটাই নীরব বলে জানা যায়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় সভা–সমাবেশ করছেন। পক্ষান্তরে মাহমুদ মোরশেদ প্রচারণায় পিছিয়ে। অন্য প্রার্থীরা হলেন গণফ্রন্টের দ্বীন ইসাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নূর উদ্দিন ও ইসলামী আন্দোলনের জয়নাল আবেদিন। 

ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা)

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু ও বিএনপি থেকে ফকরউদ্দিন আহমেদ। আওয়ামী লীগ প্রতিদিন প্রচার চালালেও বিএনপির প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এখানে ইসলামী আন্দোলনের আমানউল্লাহ সরকার ও জাকের পার্টির নাজমা আক্তারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।