বিরোধ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা বড় দুই দলের

একাদশ সংসদ নির্বাচন
একাদশ সংসদ নির্বাচন

মৌলভীবাজার-৪ আসনভুক্ত কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় আগে থেকেই দলীয় কোন্দল ছিল আওয়ামী লীগে। সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তা আরও তীব্র হয়। কিন্তু সেই বিরোধ মিটিয়ে এখন ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছেন নেতা-কর্মীরা। একই অবস্থা বিএনপিতেও। নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত থাকায় এখানে দলীয় কোনো কর্মসূচি সঠিকভাবে পালিত হয়নি। এমনকি কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিএনপির দুটি করে কমিটি ছিল। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে এখন দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের ছয়জন দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে বর্তমান সাংসদ এম এ শহীদ ও কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুর রহমান বেশি আলোচনায় ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এম এ শহীদই দলীয় মনোনয়ন পান। এরপর বিশেষ করে কমলগঞ্জে আওয়ামী লীগে কোন্দল দেখা যায়।
দলীয় সূত্র বলছে, কমলগঞ্জে তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী মনোনয়নবঞ্চিত রফিকুর রহমানের অনুসারী। ফলে সাংসদ এম এ শহীদের প্রচারণা শুরু থেকেই সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সাড়া ফেলতে পারেনি। বিষয়টি বুঝতে পেরেই তিনি বিরোধ মিটমাটের উদ্যোগ নেন।
৩ ডিসেম্বর কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকা হয়। সভায় দলীয় প্রার্থী এম এ শহীদ তাঁর বক্তব্যে সবকিছু ভুলে গিয়ে দলের ও দলীয় প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে সবার কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তখন সবাই মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভের বিষয়টি ভুলে দলীয় প্রতীক নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ঐকমত্য পোষণ করেন। ওই সভার পর কমলগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দলীয় প্রার্থীর ছোট ভাই মোসাদ্দেক আহমদকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে মনোনয়নবঞ্চিত রফিকুর রহমানকে।
রফিকুর রহমান বলেন, দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে চলতে হবে। তাই সবাইকে সঙ্গে নিয়েই নৌকার পক্ষে তাঁরা জোর প্রচারণা শুরু করেছেন।
এদিকে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে বিএনপির গৃহবিবাদ দীর্ঘদিনের। কয়েক বছর ধরে এখানে নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত। এমনকি কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিএনপির আলাদা আলাদা কমিটি ছিল। কিন্তু সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কোন্দল মিটিয়ে ফেলা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও আলম পারভেজকে সম্পাদক করে কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির একটি কমিটি রয়েছে। এ ছাড়া আবু ইব্রাহিম জমশেদকে সভাপতি ও শফিকুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে কমলগঞ্জ পৌর বিএনপির কমিটি আছে। অন্যদিকে এখানে বিএনপির প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরীর সমর্থিত দুটি কমিটিও আছে। উপজেলা কমিটিতে দুরুদ আলী সভাপতি ও আবুল হোসেন সাধারণ সম্পাদক। পৌর কমিটিতে সোয়েব আহমদ সভাপতি ও তোফাজ্জল হোসেন সাধারণ সম্পাদক। আর শ্রীমঙ্গলে মুজিবুর বিরোধী কমিটিতে আতাউর রহমান সভাপতি ও ইয়াকুব আলী সাধারণ সম্পাদক। পৌর কমিটিতে মোছাব্বির আলী সভাপতি ও শামীম আহমদ সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে মুজিবুর সমর্থিত উপজেলা কমিটিতে আতাউর রহমান সভাপতি ও ইয়াকুব আলী সাধারণ সম্পাদক। এই পক্ষের পৌর কমিটিতে নুরুল আলম সিদ্দিকী সভাপতি ও তাজ উদ্দীন সাধারণ সম্পাদক।
দলীয় সূত্র বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর হিসেবে এসেছে বিএনপির জন্য। মৌলভীবাজার-৪ আসনে মুজিবুর রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তাঁরা ওই বিরোধিতা থেকে সরে এসেছেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে মুজিবুর বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ায় এখন দুই উপজেলার সব নেতা-কর্মীই ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
১০ ডিসেম্বর আতাউর রহমান ও ইয়াকুব আলীর নেতৃত্বাধীন বিএনপির অংশটি সংবাদ সম্মেলন করে বিরোধ মিটিয়ে দলীয় প্রতীককে বিজয়ী করতে কাজ করার ঘোষণা দেয়। এরপর ১৬ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ওয়ালী সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে কমলগঞ্জে বিএনপির উভয় পক্ষের সমঝোতা বৈঠক হয়।
বিএনপির প্রার্থী মুজিবুর বলেন, ‘বিরোধ মিটিয়ে আমরা এখন দলের সবাই নির্বাচনের মাঠে নেমেছি। এবার এ আসনে বিএনপির সবাই ঐক্যবদ্ধ। কাজেই এখানে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত বলে আমি আশাবাদী।’