ভোটের প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে তথ্যপ্রযুক্তি

ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘোরা, সভা-সমাবেশ, মিছিল বা মাইকে প্রচারণা—এই ছিল চিরাচরিত নির্বাচনী প্রচার কৌশল। কিন্তু এখন অনেক নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হয়েছে। অনলাইনের কল্যাণে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণায়। এখন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে না গিয়েও তাঁদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে প্রার্থীদের বার্তা।

এবারের নির্বাচনে ঢাকা মহানগরে ১৫টি আসনে (৪ থেকে ১৮ নম্বর আসন) মোট ১৩২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনী মাঠে অনেকেরই সক্রিয় উপস্থিতি নেই। কিন্তু প্রায় সবাই অনলাইনে সরব। প্রার্থী নিজে ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা ভোটার টানতে চালাচ্ছেন নিজ দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবীর নির্বাচনী প্রচারণায় ভিন্নতা আসার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ, এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। ব্যবহারকারী বাড়ায় নির্বাচনে অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

অনলাইন খুঁজে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব বড় দলেরই ফেসবুক পেজ আছে। এসব পেজে নির্বাচন উপলক্ষে ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রমও তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে ‘নৌকায় ভোট দিন’, ‘ধানের শীষে ভোট দিন’—এমন নামের একাধিক ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। এসব পেজে বিভিন্ন ভিডিও বার্তাও দেওয়া হচ্ছে ভোটারদের।

কেন্দ্রীয়ভাবে এমন পেজের বাইরে প্রার্থীদেরও নিজস্ব ফেসবুক পেজ দেখা গেছে। ঢাকা-১২ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তাঁর ব্যক্তিগত একটি ফেসবুক পেজ আছে। পেজটিতে এ পর্যন্ত তাঁর বিভিন্ন এলাকায় করা নির্বাচনী গণসংযোগ, মতবিনিময়, পথসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ছবিসহ তথ্য দেওয়া হয়েছে।

এই আসনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী জোনায়েদ সাকি কোদাল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর রাজনৈতিক দল ‘গণসংহতি আন্দোলন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে চালানো হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা। এখানে গণসংযোগের স্থির চিত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন ভিডিও বার্তাও দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা-১৩ আসনে বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবদুস সালাম। তাঁরও একটি ফেসবুক পেজ আছে। তিনিও সেখানে তাঁর এলাকায় নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেছেন।

অনলাইনে বিভিন্ন প্রার্থী ও তাঁর অনুসারীদের কার্যক্রম অনুসরণ করে দেখা গেছে, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ব্লগসহ অনলাইনে যোগাযোগের মতো বিভিন্ন মাধ্যম থাকলেও প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ফেসবুক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই মাধ্যম বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। যুক্তরাজ্য ও কানাডাভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, ঢাকায় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সোয়া দুই কোটি। সংখ্যার দিক দিয়ে যা পৃথিবীর ফেসবুক ব্যবহারকারী শহরের মধ্যে দ্বিতীয়। ফলে প্রার্থীদের অনেকেই বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছাতে ফেসবুকে পেজে পোস্ট দিচ্ছেন বা‘বুস্ট’ওকরছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আরিফ দেওয়ান বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে কোনো ধরনের ঝুট-ঝামেলা ছাড়া, কম খরচে ভোটারদের কাছে পৌঁছানো যায়। দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেয়েও এটি সহজ। তাই প্রার্থী ও তাঁদের অনুসারীরা অনলাইন বিশেষ করে ফেসবুকে প্রচারণায় জোর দিচ্ছেন।

অনলাইনের পাশাপাশি মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমেও ভোট চাওয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে ঢাকা-৮ আসনে মহাজোটের প্রার্থী রাশেদ খান মেননের পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে ভোটারদের কাছে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ১৬ ডিসেম্বর খুদে বার্তার মাধ্যমে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনে নিজস্ব দলীয় প্রতীকে ভোট চাওয়া হয়েছে।

জহির আহমেদ নামের এক তরুণ ভোটার বলেন, এই প্রচার যুক্তিসংগত ও তথ্যবহুল হওয়া উচিত।