বাড়ি বাড়ি পুলিশি অভিযান, গ্রেপ্তার-আতঙ্কে বিএনপি

ঢাকা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থীর সুসম্পর্ক রয়েছে বলে জানান নেতা-কর্মীরা। বিএনপির প্রচারণায় বাধা দেওয়া বা হামলার তেমন কোনো ঘটনা নেই। তবে পুলিশ বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিএনপির কর্মীরা বলছেন, পুলিশি গ্রেপ্তার-আতঙ্কের মধ্যে নীরবে নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী নসরুল হামিদ বিপু ও বিএনপির প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দুজনেই ঢাকা-৩ আসনের বাসিন্দা। নসরুল হামিদের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের দোলেশ্বর এলাকায়। আর গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বাড়ি একই থানা ও একই ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকায়। নসরুল হামিদ জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। কর্মীদের নিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কর্মীদের নিয়ে সুবিধামতো নীরবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বড় পরিসরে নামতে ভয় পাচ্ছেন কর্মীরা। স্বল্প পরিসরে প্রচারণার মধ্যেও হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ৷ গত সপ্তাহে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল জব্বারকে ঢাকার পল্টন এলাকা থেকে পুলিশ আটক করেছে। তিনি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ ছাড়া গত শুক্রবার রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ নিজামকে আটক করা হয়। ওই রাতে তেঘরিয়া ইউনিয়নের বিএনপির নেতা খুরশেদের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। মোজাদ্দেদ আলী আরও বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে বাধা না দেওয়া হলেও পুলিশ বিএনপির সমর্থকদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে চাইছে।’

বিএনপির স্থানীয় কর্মীরা বলছেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নয়, পুলিশই এখন বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে।’

২০০৮ সালে কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিনজিরা, আগানগর, শুভাঢ্যা, কোন্ডা ও তেঘরিয়া ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-৩ আসন গঠিত হয়। ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১১ হাজার ৬৪৭। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে নসরুল হামিদ সাংসদ নির্বাচিত হন। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি।

গত সোমবার কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর ও শুভাঢ্যা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এসব এলাকা আওয়ামী লীগের প্রার্থী নসরুল হামিদের নির্বাচনী ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। এদিকে বিএনপির প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পক্ষে নির্বাচনী ব্যানার, পোস্টার তুলনামূলকভাবে তেমন চোখে পড়েনি। তবে দলের নেতা-কর্মীরা যে যার অবস্থান থেকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা ও প্রতিপক্ষের হামলার মানে গণতন্ত্রকে হত্যা করা। আমি নির্বাচন করতে চাই। মারামারি ও সংঘাতে বিশ্বাসী নই। ঘাত-প্রতিঘাত যতই আসুক, নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে আছি, থাকব।’

নসরুল হামিদ বলেন, ‘নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেই। প্রার্থীরা যে যার মতো করে নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। বিএনপির প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। তাঁর সঙ্গে কখনো কোনো বিষয় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্য হয়নি।’

আর পুলিশি হয়রানির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাজামান বলেন, পুলিশ স্বাভাবিক অভিযান চালাচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই অভিযান নয়।