মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে আ. লীগ: আনু মুহাম্মদ

আনু মুহাম্মদ
আনু মুহাম্মদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘গত দশ বছরের উন্নয়ন দশকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-লুণ্ঠনসহ যত ধরনের অভিযোগ আছে, সবকিছুকে সামাল দিতে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও উন্নয়নকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে। যে মেগা প্রকল্পগুলো আওয়ামী লীগ উন্নয়ন হিসেবে হাজির করছে, সেগুলো আমরা উন্নয়ন হিসেবে গ্রহণযোগ্য মনে করব কি না তার পর্যালোচনার অভাবই আওয়ামী লীগকে এক ধরনের উচ্ছ্বাস তৈরি করার ক্ষমতা দিয়েছে।’

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর সভাকক্ষে সমাজ গবেষণা কেন্দ্র আয়োজিত এক সেমিনারে আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন।

সেমিনারে ‘নির্বাচন পদ্ধতি’ ও ‘রাজনৈতিক ইশতেহারে অর্থনৈতিক ইস্যুর প্রতিফলন’ বিষয়ে দুটি আলাদা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। প্রথম প্রবন্ধটির লেখক জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, দ্বিতীয়টির লেখক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন। নজরুল ইসলামের পক্ষে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ।

আনু মুহাম্মদ বলেন, মানবাধিকার বিষয়ে অগ্রগতিকে সরকারের সাফল্য বলা হচ্ছে। একের পর এক ঘটে যাওয়া গুম, খুন আর ক্রসফায়ারকে সাফল্য বলে সেটাকে আবার অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করা হচ্ছে। তার মানে এ ধরনের মানবাধিকার পরিস্থিতি আবার অব্যাহত থাকবে। ভয়ংকর দুর্নীতিমূলক তৎপরতাও অব্যাহত থাকবে। তার প্রধান শক্তি হিসেবে থাকবে বাংলাদেশের শীর্ষ ঋণখেলাপি,মাদক ব্যবসায়ী ও বন-জঙ্গল-নদী দখলকারীরা। এরাই হচ্ছে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী। তারা যাতে নির্বাচনে জিতে আসে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। অনেক সহজ বিকল্প থাকা সত্ত্বেও সুন্দরবন ধ্বংস করে বিদ্যুৎ প্রকল্প করা হচ্ছে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন গ্রুপকে খুশি করার জন্য।

গণতন্ত্রের বিকাশে সংখ্যাগরিষ্ঠতাভিত্তিক নির্বাচন-ব্যবস্থার পরিবর্তে আনুপাতিক নির্বাচন-ব্যবস্থার প্রবর্তন একটি সম্ভাবনাময় পদক্ষেপ হতে পারে উল্লেখ করে ‘নির্বাচন পদ্ধতি’ শীর্ষক প্রবন্ধে আনুপাতিক নির্বাচন-ব্যবস্থার দশটি ইতিবাচক ও তিনটি নেতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়।

‘রাজনৈতিক ইশতেহারে অর্থনৈতিক ইস্যুর প্রতিফলন’ শীর্ষক প্রবন্ধে ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইশতেহার উন্নয়নের ডিসকোর্সের আবর্তে আটকে গেছে। তাদের ইশতেহারের মূল ফোকাস উন্নয়নের ওপর বিএনপির ইশতেহারে গণতন্ত্রকে নিত্যদিনের অনুশীলনে পরিণত করার কথা আছে। তাদের মূল ফোকাস রাজনৈতিক। কিন্তু মৌলিক কিছু প্রশ্নের উত্তর তাদের কারও ইশতেহারেই আসেনি। যেমন সংবিধানের চার মূলনীতির আজকের অর্থ কী, আমরা কী ধরনের রাষ্ট্র চাই- এসব প্রশ্ন আলোচিত হয়নি। বিএনপির ইশতেহারে পুনরায় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির অঙ্গীকার দেশে নতুন করে বিভাজন সৃষ্টি করবে।’

সমাজ গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য অধ্যাপক তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, আহরার আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।